রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: বাড়ির দাওয়ায় বসে ছেলের চরম শাস্তি দাবি করলেন বাবা। বৃহস্পতিবার কাঁথি মহকুমা আদালত চত্বরে বোমা ফাটিয়ে, গুলি চালিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে বিচারাধীন বন্দি তথা দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা। ছেলের এমন কুকীর্তির খবর জানতে পেরে বাবা ধ্রুব বেরা বলেন, ‘‘ছেলে যদি অন্যায় করে, তবে চরম শাস্তি দেওয়া হোক।’’
কাঁথির জুনপুট উপকূল থানার মাজিলাপুর গ্রামে বাড়ি কর্ণের। তবে কর্ণের বিষয়ে এলাকার বাসিন্দারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কেউ কিছু বলতে চাইছেন না। সকলেরই এক কথা, যদি কিছু বলি, তাহলে হয়তো একদিন দুষ্কৃতীদের হামলা হতে পারে। তার চেয়ে চুপ থাকাই ভাল।
মাজিলাপুর গ্রামের বেরাপাড়ায় ইটের গাঁথনি ও অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট বাড়ি কর্ণদের। সেখানে এখন ধ্রুববাবু একাই থাকেন। গ্রামেরই এক মহিলা তাঁর দেখাশোনা করেন। জানা গিয়েছে, আগে মাছের ব্যবসা করতেন ধ্রুববাবু। বর্তমানে ওঝাগিরি, ঝাড়ফুঁক করেই তাঁর দিন গুজরান হচ্ছে। ধ্রুববাবুর দুটি বিয়ে। প্রথম পক্ষের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। আর দ্বিতীয় পক্ষের এক ছেলে। প্রথম পক্ষের দুই ছেলের মধ্যে বড় তপন এবং ছোট কর্ণ। প্রথম স্ত্রী গীতা বেরার অপঘাতে মৃত্যু ঘটে। তার আগেই কলকাতার বাসিন্দা রমারানিকে বিয়ে করেন ধ্রুববাবু। যদিও দ্বিতীয় স্ত্রী রমারানি বেরা এক বছর সংসার করার পর ছেলেকে নিয়ে কলকাতা চলে যান। তখন কর্ণ খুব ছোট। পরে আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো স্থানীয় ডাউকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কর্ণ। তারপর থেকে একটু একটু করে কর্ণের জীবনের ‘গ্রাফ’ বদলাতে থাকে। একদিকে ছোট থেকেই নিজের মা কিংবা সৎমায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত কর্ণ। অন্যদিকে, ব্যবসার কারণে দিনের একটি বড় সময় বাড়ির বাইরেই থাকতেন ধ্রুববাবু। আর বাড়িতে ধ্রুববাবুর বাবা-মা অর্থাৎ বৃদ্ধ ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কাছে থাকত কর্ণ। এতে বাড়িতে কার্যত শাসনহীন হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো বাঁধনছাড়া হয়ে যায় কর্ণ।
এভাবে চলতে চলতেই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীনই একদিন পড়া ছেড়ে দেয় সে। তারপর থেকে একটু একটু করে তাস-জুয়া খেলা, মদ্যপানের আসর বসানো-সবেতেই পটু হয়ে ওঠে কর্ণ। মদ-জুয়ার খোরাক জোগাতে বাবার পকেট কেটে টাকা চুরি দিয়ে শুরু বলে অভিযোগ। এরপর লোকের বাড়িতে ডাব, কলার কাঁদি ছাড়াও টিভি, সাইকেল, বাইক চুরি করা, আরও অনেক কিছুই চুরি করত কর্ণ। চুরি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার ধরাও পড়ে সে। জেলে গিয়েই মুন্নাদের মত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মেলামেশা হয় কর্ণের। পরবর্তীকালে বড়মাপের দুষ্কৃতী হয়ে যায় কর্ণ। তার পরের বড় ধরনের ঘটনাগুলি তো সকলেরই জানা। কর্ণের এমন অসামাজিক কাজকর্ম এবং পারিবারিক পরিস্থিতি দেখে তার দাদা তপন বেরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে এগরায় শ্বশুরবাড়িতেই গিয়ে রয়েছেন।
[কোলিয়াড়িতে দুর্ঘটনা, চাঙড় ভেঙে ২ ইসিএল কর্মীর মৃত্যু]
বাড়ির সঙ্গে তাঁর কোনওরকম যোগাযোগ নেই। বছর সাতষট্টির ধ্রুববাবু বলেন, “একটা সময় ছেলের এই চুরি করার জন্য তাকে অনেক মারধর করেছি। শাসন করেছি। চেন দিয়ে বেঁধেও রেখেছি। ছেলের জন্য আমাকে বেশ কয়েকবার বিচারসভায় বসতে হয়েছে। কিন্তু তাকে কোনওদিন বাগে আনতে পারিনি। বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। ছেলের এই অন্যায় কাজকর্ম দিনের পর দিন সহ্য করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেকে তিন তিনবার পুলিশের হাতে ধরিয়েও দিয়েছি। একবার তো ভেবেছিলাম, আর সহ্যই হচ্ছে না। ছেলেকে এবার প্রাণে মেরেই ফেলব৷ কিন্তু পারিনি। তবে অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দিইনি। আজও দিতে চাই না। ছেলে অন্যায় যখন করেছে, তখন আমি চাই তার চরম শাস্তি দেওয়া হোক। বাবা হয়ে ছেলের কেচ্ছা আর কতদিন শুনব?”
কাঁথির জালালখাঁবাড়। ভাঙাচোরা বাড়ি। অ্যাসবেসটস ছাউনি দেওয়া। থাকে শেখ ফারাজ। মুন্নার ভাই। তিনি রিকশা চালান। স্ত্রী সালমা বিবি। ফারাজের দাদা মুন্নার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি ভাইয়ের। দাদার বয়স যখন ১৫, তখন মা নুরনাহার বিবি তাকে মুম্বই পাঠিয়ে দেয়। মুন্না এইট পর্যন্ত পড়ে কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদন হাইস্কুলে। অভাবের কারণেই বতাকে মুম্বই পাঠিয়ে দেন মা। তখন মুন্নার বাবা সেফায়েত শেখ জীবিত ছিলেন। পরে মা ও পালিয়ে যান। কোথায় যান কেউ যানে না। পরে বাবার মৃত্যু ঘটে। তবে আদালতে মুন্নার সঙ্গে দেখা করতে তার মা প্রায়ই আসতেন বলে দাবি পুলিশের। প্রতিবেশী শেখ আসেদ জানান, মুন্না পড়াশোনায় ভাল ছিল। কিন্তু মুম্বই গিয়ে বদলে যায়। ১৯ বছর মুন্নার সঙ্গে ভাই এবং প্রতিবেশীদের কোনও সম্পর্ক নেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.