দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সাতের দশকে বিহারের শোনপুরে নারী বিক্রির সময়ের অশ্লীল নাচের দৃশ্য মনে আছে৷ যেখানে মঞ্চের উপর উদ্দাম নৃত্যরত যুবতীর শরীরের গোপন অংশ দেখে নিয়ে দরদাম করতেন খরিদ্দাররা। এবার সেই একই দৃশ্য ফিরে এল ভাঙড়ের শানপুরের নিমকুড়িয়া গ্রামে। লোকসভা ভোটে দলের বিপুল জয় ‘সেলিব্রেট’ করার জন্য ওই গ্রামে এমনই এক নাচের আসর বসালেন স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান ও যুব তৃণমূল নেতারা। শুধু আসর বসানোই নয়, বার ডান্সারের চরম অশ্লীল নাচের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে, জড়িয়ে ধরে নাচলেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ নেতারা। উত্তেজক নাচের জেরে বড়মাপের অশান্তি আটকাতে এলাকায় যায় কাশীপুর থানার পুলিশ৷ বিনা অনুমতিতে হওয়া ওই নাচ বন্ধ করে দেয় তাঁরা৷ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে তিন জন৷
[ আরও পড়ুন: অনুমতি ছাড়াই জনসভা, হেঁড়িয়াতে ভারতী ঘোষের কনভয় আটকাল পুলিশ ]
লোকসভা নির্বাচনে ভাঙড় থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিজয় মিছিল বা এমন কোনও কর্মসূচি নেওয়া দলের তরফে আপাতত বন্ধ। কিন্তু শানপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান আনসার মোল্লা ও যুবনেতা শ্যামল মণ্ডলের নেতৃত্বে নিমকুড়িয়ায় সোমবার রাতে এক জলসার আসর বসে। কাওয়ালি গানের আসর বসার কথা থাকলেও কলকাতা থেকে কয়েকজন বার ডান্সার নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। অভিযোগ, প্রথম থেকেই অত্যন্ত আপত্তিকর ও স্বল্প পোশাকে নাচ শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ চলার পর একজন নর্তকী ওঠেন গোলাপি স্কার্ট ও কালো রঙের টপ পরে। টপে লেখা আপনা ডান্স। পায়ে কালো জুতো। এই নর্তকীর নাচ শুরু হতেই উত্তাল হয়ে উঠে জলসায় আসা হাজার কয়েক যুবক। মহিলারা জলসা খালি করে চলে যান। কারণ, ওই নর্তকীর কার্যত উলঙ্গ হয়ে স্কার্ট তুলে মঞ্চের সীমানায় দাঁড়িয়ে নাচছিল। এবং যুবকদের দিকে বারবার স্কার্ট তুলে দেখাচ্ছিল৷ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, এক তৃণমূল নেতা মঞ্চে উঠে গিয়ে এই অশ্লীল নাচ করা যুবতীর সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচছেন। কানে কানে বলে দিচ্ছেন। আর তারপরই জনতার কাছে গিয়ে স্কার্ট উচিয়ে শরীরের গোপন অংশ দেখায় ওই নর্তকী।
[ আরও পড়ুন: কাটমানি ফেরত চেয়ে পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি ঘেরাও, উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ ]
নাচের জলসায় থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘মেয়েগুলো কার্যত উলঙ্গ হয়ে এত বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে নাচছিল৷ মনে হচ্ছিল যেন চোখের সামনে নীল ছবি দেখছি। ছোট ছেলেমেয়েরা, স্কুল পড়ুয়া, সবাই লজ্জায় মুখ ঢাকে।’ অভিযুক্ত উপপ্রধান আনসার মোল্লার ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রায় বছর সাতেক আগে এই ভাঙড়ে এক জলসায় একই রকম ভাবে টাকা ওড়াতে দেখা গিয়েছিল শাসকদলের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা নিয়েছিল দল। এবারও ঘটল আরও এক কলঙ্কজনক ঘটনা৷ তাও তৃণমূলের বিজয় সেলিব্রেট করার নামে তৃণমূলের আয়োজনে হওয়া অনুষ্ঠানে। মঞ্চে এমন উত্তেজক নাচ থেকে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে নাচ বন্ধ করে দেয়। জলসা বন্ধ করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে উপপ্রধান ও যুবনেতার সঙ্গে বচসা হয়।
[ আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতায় আন্দোলনে আদিবাসীরা ]
উল্লেখ, আরাবুল-পুত্র পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের প্রধান হাকিমুলের দক্ষিণহস্ত বলে ভাঙড়ে পরিচিত ওই যুবনেতা। ঘটনায় স্বভাবতই মুখ পুড়েছে ভাঙড়ের তৃণমূল নেতৃত্বের। এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ভাঙড়-২ ব্লক সভাপতি ওহিদুল ইসলাম। ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম বলেন, “এই জলসার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নন, ঘটনাটি খুবই নিন্দাজনক। দলের তরফে জলসায় এমন অশ্লীল নাচের তীব্র প্রতিবাদ করছি।” দলের আরেক নেতা তথা ভাঙড়-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কাইজার আহমেদ বলেন, “এমন জলসার সংস্কৃতি তৃণমূলের নয়। যে বা যাঁরা বেআইনিভাবে অশ্লীল-নোংরা নাচ দেখিয়ে ভাঙড়বাসীকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।” বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী রিপোর্ট তলব করেছেন। অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপপ্রধান ও যুবনেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে দলের তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.