ধীমান রায়, কাটোয়া: পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটের ফলাফলে এলাকায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর বিজেপিকে ভোটে জেতানোর ’অপরাধে’ ওই সংসদ এলাকায় নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েতের সদস্য। তাই বাধ্য হয়ে নিজেরাই চাঁদা তুলে নালা পরিষ্কার করতে নেমেছেন কাটোয়ার খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের পানুহাট পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পাড়ায় বিজেপি লিড দেওয়ায় পঞ্চায়েত থেকে পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কাটোয়ার খাজুরডিহি পঞ্চায়েত এলাকায় পানুহাট পশ্চিমপাড়ায় রয়েছে দুটি বুথ। ১৩ ও ১৪ নম্বর সংসদ মিলে ১৬৪৮ জন ভোটার রয়েছেন। অধিকাংশই শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের বসবাস। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন তাঁদের পাড়ায় নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হয়নি। রাস্তার উপর নোংরা জল জমছে। দূষণ ছড়ানোর পাশাপাশি বাড়ছে মশার উপদ্রব। এনিয়ে বারবার পঞ্চায়েতে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মাম দেবনাথ, বাপ্পা দেবনাথরা বলেন, ”আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা দেবনাথের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা আগেও বলেছিলাম।। তখন তিনি বলেছিলেন, ভোটের জন্য কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। ভোট মিটলে নালা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। গত শুক্রবারেও আমরা পঞ্চায়েত সদস্যার কাছে গিয়েছিলাম। তখন তার স্বামী কানাই দেবনাথ আমাদের বলেন, ” তোমরা বিজেপিকে ভোটে জিতিয়েছে। এবার মোদি এসে নালা পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে। আমরা পারব না।”
[আরও পড়ুন: ওয়ার্ডে জিতেছে বিজেপি, পানীয় জলের কল ভাঙার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে]
পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সুমন দেবনাথ বলেন, ” আমরা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে জবাব পেয়ে নিজেরাই চাঁদা তুলে নিজেরাই নালা পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিই।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে পশ্চিমপাড়ার বেশকিছু বাসিন্দা নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে শুরু করেন। চাঁদা তুলে ব্লিচিং পাউডার ছেটান। পানুহাটের বাসিন্দা বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা(গ্রামীণ) কমিটির সম্পাদিকা সীমা ভট্টাচার্য বলেন, ” তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করে আসছে। না হলেও এমন কেউ বলতে পারে অন্য দলকে ভোট দিলে সরকারি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
জানা গিয়েছে, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পানুহাট পঞ্চিমপাড়ায় এবার লোকসভা ভোটে দুটি সংসদেই বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। দুটি সংসদ মিলে তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল যেখানে ৩৯০টি ভোট পেয়েছেন সেখানে বিজেপির প্রার্থী পেয়েছেন ৮৩৫টি ভোট। যদিও স্থানীয়দের তোলা অভিযোগ মানতে চাননি পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী কানাই দেবনাথ। তিনি বলেন, ” মোদি এসে করে দেবে একথা বলিনি। আমি শুধু বলেছিলাম কেন্দ্র সরকার এখন ১০০ দিনের প্রকল্পে নালা পরিষ্কারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পরে অন্য ফান্ড থেকে করে দেওয়া হবে।” থাজুরডিহি পঞ্চায়েতের প্রধান আন্না দত্ত মণ্ডল বলেন, ”আমরা রাজনীতির রং দেখে পঞ্চায়েত পরিচালনা করি না। উন্নয়ন সবার জন্যই। এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.