বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার জেরে নিচুতলায় তৈরি ক্ষোভ-হতাশা কি সামলে উঠতে পারবে বাম-কংগ্রেস শিবির? নাকি এবারও রাগে-অভিমানে ভোট যাবে রামে! দার্জিলিং লোকসভা আসনে ওই জোটের পরিস্থিতি দেখে এমনই শঙ্কা বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, প্রার্থী ঘোষণায় দেরি হওয়ায় প্রচারে সমস্যা হলেও সাংগঠনিক ভোট অন্যদিকে চলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উলটে এবার ভোট বাড়বে।
প্রথমে তৃণমূল এবং পরে বিজেপি প্রার্থী প্রচার শুরু করে দিলেও দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোট শিবিরে অদ্ভুত হতাশার ছবি। অবশেষে প্রার্থী ঘোষণা হলেও পুরোদমে প্রচার শুরু করা সম্ভব হয়নি। এই আসনে বৃহস্পতিবার সর্বশেষ মনোনয়ন জমা করেন জোট প্রার্থী মুনীশ তামাং। এর পর ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক বিনয় তামাংয়ের মান ভাঙানো এবং জোট সঙ্গী সিপিএমের সঙ্গে বৈঠক করে সময় কাটছে প্রার্থীর। শনিবার শিলিগুড়িতে অনীল বিশ্বাস ভবনে দার্জিলিং জেলা সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রার্থী। যদিও ইতিমধ্যে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা এবং বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তাকে নিয়ে দলীয় কর্মীরা লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকা চষে বেড়াতে শুরু করেছেন। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর সমস্যা এখানেই। তার সঙ্গে এখনও নিচুতলার দলীয় কর্মীদের দেখা মেলেনি। তাঁদের মধ্যে প্রার্থীকে নিয়ে তেমন উৎসাহ নজর কাড়ছে না। উলটে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে টালবাহানার জেরে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল সেটা রয়েই গিয়েছে।
ওই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ফিরছে তবে কি সিপিএম এবং কংগ্রেসের নিচুতলার ভোট এবারও বিজেপির দিকে ঝুঁকতে চলেছে? বস্তুত সমতলের ভোট জোট প্রার্থীর ভরসা। পাহাড়ের ভোটের জন্য হামরো পার্টির উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে তাঁকে। সেখানে কংগ্রেস ও সিপিএমের প্রভাব খুবই সীমিত। পরিস্থিতি বুঝেই প্রার্থী ঘোষণার অনেক আগে থেকে সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়ে রাখেন ভোটে জয়লাভের স্বপ্ন এখনও তাঁরা দেখছেন না। যে ভোট ঘরছাড়া হয়েছে সেটা ফেরানো হবে লক্ষ্য। কিন্তু একে দলীয় প্রার্থী নেই। তার উপর প্রার্থী ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রিতা দেখে নিচুতলার সিপিএম কর্মীরা রীতিমতো তিতিবিরক্ত। ঘরছাড়া ভোট ঘরে ফেরানোর কথা এখন কেউ বলছেন না। স্বভাবতই তৃণমূল অথবা বিজেপি এই দুই শিবির ঘিরে তাঁদের ভাবনা-চিন্তা আবর্তিত হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এক্ষেত্রে বিজেপির বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক সমন পাঠক রাজনৈতিক মহলের অনুমান ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “বামেদের একটিও ভোট অন্য কোথাও যাবে না। জোট প্রার্থী পাবেন। প্রার্থী ঘোষণায় দেরি হওয়ায় প্রচারের সমস্যা কিছুটা হলেও আমরা সম্মিলিতভাবে সর্বত্র পৌঁছাতে চেষ্টা করব।”
সমস্যার কথা অস্বীকার করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় প্রচার করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় প্রকাশ করছেন তারা। তার উপর বিনয় তামাং এখনও চুপচাপ। পাহাড়ে জোট প্রার্থী সমর্থনে যতটুকু প্রচার চলছে সেটা করছেন অজয় এডওয়ার্ড। সেটাও সর্বত্র নয়। কারণ, হামরো পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো জায়গায় নেই। দলে ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলর এবং নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ওই পরিস্থিতিতে অজয় কতটা বিজেপির ভোট কাটতে পারবেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় বাড়ছে। এদিকে সমতলে কংগ্রেসের নিচুতলাতেও হতাশা কাটেনি। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জীবন মজুমদার অবশ্য দাবি করেন কিছু সমস্যা থাকলেও মিটে যাবে। তিনি বলেন, “পাহাড়-সমতলে জোট প্রার্থীর ভোট বাড়বে। প্রচারের সময় বেশি মিলবে না এটা ঠিক। কিন্তু মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ জোটের পক্ষেই থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.