Advertisement
Advertisement

Breaking News

ভোটকর্মী

রাজকুমারের পুনরাবৃত্তি চান না কেউ, কেন্দ্রীয় বাহিনী না পেলে ভোট বয়কট

আগুনের মতো এই স্লোগান ছড়াল গোটা রাজ্যে।

Vote workers want central force during Lok Sabha Election
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:April 6, 2019 9:12 pm
  • Updated:April 17, 2019 5:57 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ব্য়ুরো: ‘কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার, চাই না হতে রাজকুমার।’ আগুনের মতো এই স্লোগান ছড়াল গোটা রাজ্যে। প্রত্যেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে ভোট বয়কটের ডাক দিলেন শিক্ষক ও সরকারি কর্মীরা। গত মাসে এই ক্ষোভ শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। লোকসভা ভোটের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এবার উত্তাল হল দক্ষিণবঙ্গ। শনিবার কলকাতার চেতলা, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া, তমলুক, এগরা, কাঁথি, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর, ঘাটাল, এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় তুমুল বিক্ষোভ হয়।

প্রত্যেকটি কেন্দ্রে গণস্বাক্ষর জোগাড় করে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের বক্তব্য, সিভিক ভলান্টিয়ার বা রাজ্য পুলিশ লোকসভা ভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলে তাঁরা কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। গত পঞ্চায়েত ভোটে বুথ থেকে শিক্ষক রাজকুমার রায় প্রথমে নিখোঁজ হন, পরে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই উদাহরণ তুলে ধরে প্রশিক্ষণে আসা শিক্ষক ও সরকারি কর্মীরা বলেন, তাঁরা গণতন্ত্রে আস্থাশীল হলেও প্রাণ হাতে করে কোথাও যাবেন না। নিজেদের দাবি নিয়ে ৮ এপ্রিল কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করবে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্লোগান নয়, অভিষেকের প্রচার মিছিলে সুর তুলছে লোকগান]

কলকাতার চেতলা গার্লস স্কুলে এদিন কয়েকশো শিক্ষক ও সরকারি কর্মী প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। স্বপন মণ্ডল ও আলতাফ আহমেদের মতো শিক্ষকরা জানিয়েছেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে নির্বিচারে প্রিসাইডিং অফিসারদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। ভোট লুঠে বাধা দেওয়ায় শিক্ষক রাজকুমারকে খুন করা হয়েছে। আমরা কেউ দ্বিতীয় রাজকুমার হতে চাই না। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে পাহাড় থেকে সাগর সবাই ভোট বয়কট করব।” কাঁথির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এদিন শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খেজুরির শিক্ষক সোমনাথ সামন্ত বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণ পুস্তিকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কথা বলেছে। তারপরও যদি না থাকে তাহলে কার ভরসায় বুথে যাব। বুথে গিয়ে মরার চেয়ে আগেই মেরে দিক।” হলদিয়ায় কয়েকশো শিক্ষক ও সরকারি কর্মী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পঞ্চায়েতে ভোট লুঠে বাধা দিতে গিয়ে ভোট কর্মীদের করুণ হাল উল্লেখ করেন তাঁরা। এগারাতেও একই ছবি ধরা পড়েছে। এদিন হাওড়ার উলুবেড়িয়াতেও একই রকম অসন্তোষ দেখা গিয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নিতে এসে বিক্ষোভ দেখান ভোটকর্মীরা। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় খড়্গপুরে। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই শিক্ষক। নিরাপত্তার দাবিতেই তাঁরা বিক্ষোভে শামিল হন। প্রতিটি বুথেই আধাসেনা চান তাঁরা। বিক্ষোভ সামাল দিতে আসেন প্রশাসনিক কর্তারা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দিনের প্রশিক্ষণের আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে। তা না পেলে তাঁরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন। রবিবার মেদিনীপুর ও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ হবে। এদিন খড়্গপুর, মেদিনীপুর ও ঘাটাল শহরের বিভিন্ন স্কুলে সেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। দুদিনে প্রায় ১৭ হাজার ভোটকর্মী প্রশিক্ষণ নেবেন। আগে একদফা মহিলা ও প্রতিবন্ধী ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ হয়েছে।

এদিন সাধারণ ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণের শুরুতেই তাল কাটে খড়্গপুরে। ইন্দা কলেজে প্রশিক্ষণ নিতে এসে সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শিক্ষকদের একাংশ। সংগঠিত করার কাজ করে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ। সারা রাজ্যজুড়েই তাদের এই আন্দোলন চলছে। মঞ্চের সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেছেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার শিক্ষক রাজকুমার রায়ের পরিণতি আজও ভোটকর্মীদের শিহরিত করে। কেউ সেই পরিণতি চান না। ভোট কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু নিরাপত্তা না পেলে সে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।” প্রথমার্ধে খড়্গপুর ইন্দা কলেজে এবং দ্বিতীয়ার্ধে খড়্গপুরেরই সাউথ সাইড বয়েজ স্কুলে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষকদের একাংশ। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকারের কাছে স্মারকলিপিও জমা পড়েছে।

[আরও পড়ুন: নাকাশিপাড়ায় এলোপাথাড়ি কোপে খুন যুবক, কর্মী বলে দাবি বিজেপির]

ঝাড়গ্রাম জেলাতেও তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে এদিন। প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোটগ্রহণ করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। জেলাশাসকদের দপ্তরের বাইরে মঞ্চের সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে স্লোগান দেন। ঐক্য মঞ্চের পক্ষে সুজিত প্রতিহার বলেন, “প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে ভোট কর্মীদের জন্য যাতায়াতের সুষ্ঠ ব্যবস্থা করতে হবে এটাই আমাদের দাবি।” শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গেও এদিন বিক্ষোভ হয়েছে। ৩১ মার্চ প্রথমে বালুরঘাটে বিদ্রোহ দেখা যায়। তারপর আলিপুরদুয়ারে। শুক্রবার তুফানগঞ্জ, দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জে বিদ্রোহী হন শিক্ষকরা। প্রযোজনে তাঁরা আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এদিন ফের সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে মাথাভাঙা, দিনহাটা এবং কোচবিহারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ দেখা গিয়েছে।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement