শুভজিৎ মণ্ডল: কমিশনের নির্দেশমতো ভোটের ডিউটিতে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের মণীশপ্রকাশ সরকার। অশোকনগরের নেতাজি শতবার্ষিকী কলেজের অশিক্ষক কর্মী মণীশবাবু। গত ১৯ মে সপ্তম দফার ভোটে তাঁর ডিউটি পড়েছিল বিধাননগর এলাকার চণ্ডীপুর হাই স্কুলে। ভোটের দিন সকালে অসহ্য গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন মণীশবাবু। প্রবল জ্বর এবং সেই সঙ্গে পেটের সমস্যা কাহিল করে দিয়েছিল মণীশবাবুকে। ডিহাইড্রেশন তাঁর শরীরকে ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত কাজ চালাতে না পেরে, ডিউটি থেকে অব্যাহতি চান ওই অশিক্ষক কর্মী। অভিযোগ, এহেন পরিস্থিতিতেও কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি মণীশবাবুকে। উলটে, জোর করে তাঁকে দিয়ে ভোটের কাজ করানো হয়।
মণীশবাবু চণ্ডীপুরের ১১৫/১৮২ নং বুথের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ওই ভোটকর্মীর মেয়ে তিয়াসা সরকার জানান, “সকাল ১১টা নাগাদ বাবার কাছ থেকে একটি ফোন পাই। তখন বাবা ঠিক করে কথাও বলতে পারছিল না। আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখনই বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।” অভিযোগ, অসুস্থ অবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে রিলিজ চেয়েছিলেন মণীশবাবু। কিন্তু, তাঁকে ছাড়পত্র দেননি ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ছাড়পত্র না নিয়েই ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়েন মণীশবাবু। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে ভরতি করান তাঁর স্ত্রী। প্রথমে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় অশোকনগরের একটি নার্সিংহোমে। এখনও সেখানেই ভরতি আছেন মণীশবাবু।
মণীশবাবুর মেয়ে আরও বলছিলেন, “দু’দিন চিকিৎসার পর একটু ভাল আছে বাবা। সেদিন যদি কমিশনের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করতাম তাহলে হয়তো বড় বিপদ হয়ে যেত। সেদিন কার্যত লুকিয়ে বাবাকে বের করে আনতে হয়েছিল ভোটকেন্দ্র থেকে। এরপর যদি বাবার বিরুদ্ধে কমিশন কোনও পদক্ষেপ করে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।” এখানেই প্রশ্ন উঠছে কমিশনের ভূমিকায়। একজন ভোটকর্মী গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কাজ করতে বাধ্য করা হল কেন? আর কেনই বা রিজার্ভ পোলিং অফিসার থাকা সত্ত্বেও মণীশবাবুকে হাসপাতালে ভরতি করা হল না। বুথে প্রাথমিক চিকিৎসার আদৌ কোনও ব্যবস্থা ছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।
ভোটের আগে নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ভোটকর্মীদের একটা বড় অংশ। কিন্তু, ভোট করাতে গিয়ে এত অব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি ভোটকর্মীরা। প্রথমত রাজ্যের বহু বুথে ভোটকর্মীদের জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো ছিল না। এই তীব্র গরমেও ছিল না ফ্যানের ব্যবস্থা। থাকার জায়গায় উপযুক্ত শৌচাগার তো ছিলই না, এমনকী থাকা খাওয়ার বন্দোবস্তও ছিল তথৈবচ। মোট কথা ভোটকর্মীদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিন্দুমাত্র ব্যবস্থা ছিল না। উলটে বহু ভোটকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। এমনই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.