দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সারাদুনিয়া জুড়ে এখন ভ্লগারদের বাড়বাড়ন্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে আয় করছেন অনেকেই। ভিউস অর্থাৎ আয়ের নেশায় অনেকেই জেনে শুনে ঝাঁপ দিচ্ছেন বিপদে। এবার এক ভ্লগারকে দেখা গেল সুন্দরবেনর ঘন জঙ্গলে। যেখানে যে কোনও মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে দক্ষিণরায়। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি পোস্ট করেছেন ওই ভ্লগার। যা রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের জঙ্গলে এইভাবে ভ্লগারদের নামানো যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বনদপ্তর এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। যা খতিয়ে দেখছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, পর্যটকদের জঙ্গলে নামানোর কোনও অনুমতি থাকে না। ভ্রমণের শুরুতেই বারবার বনদপ্তরের তরফ থেকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও জারি করা হয়। গাছের পাতায় হাত দেওয়া, প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করা, এমনকী জঙ্গলে নামার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। তা সত্ত্বেও বনদপ্তরের নজরদারি এড়িয়ে কী করে এই সমস্ত ভ্লগাররা জঙ্গলে ঢুকছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ব্যাঘ্র প্রকল্প আধিকারিকদেরকেও জানানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তর ও ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সৃজিত চন্দ নামে ওই ভ্লগার বলেন, তিনি বাঘের জঙ্গলে নামেননি। তিনি হোটেলের সামনে লোকালয়ে নেমেছিলেন। এখানেই অন্য প্রশ্ন। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, যে কোনও সময় বাঘের আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারেন। তবে কি তিনি মিথ্যে বলেছেন? উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন সৃজিতবাবু। বিভিন্ন ভ্লগারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও লঞ্চ ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়ে ভ্লগ করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠে, ভ্লগ যেটা দেখা যায় বাস্তবে সেটা পান না সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা। আবারও প্রশ্ন উঠছে, ভ্লগারদের বক্তব্য কতটা সত্য তা নিয়ে।
এ বিষয়ে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুন্ডু বলেন, “এই সমস্ত ভ্লগারদের জঙ্গলে ঢোকা একেবারে বন্ধ হওয়া উচিত। এটা ট্যুরিজমের পরিপন্থী। এর ফলে শুধু সুন্দরবনের ট্যুরিজম নয় সমস্ত জঙ্গল ট্যুরিজমের ক্ষতি হবে। শুধু তাই নয়, সুন্দরবন সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাবে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ ও পরিবেশবিদের কাছে।” ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জাস্টিনস জোন্স বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে লোকালয়ে সংলগ্ন কোনও জঙ্গল থেকে এই ছবি তোলা হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.