সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের জমি বিতর্ক উসকে দিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এবার তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারই কাগজ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিতর্কিত জমি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মালিকাধীন। কিন্তু সেই দাবি মানতে নারাজ বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তাঁর পালটা দাবি, “রাজ্যে কীভাবে কাগজ তৈরি হয়, সেটা সবাই জানে। আমি কাগজ দেখতে চাই না।” তাঁকে পালটা দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ” অমর্ত্য সেনকে অপমান করলে বাংলার মানুষ ক্ষমা করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এতদিনের রাজনৈতিক ইতিহাস যেন উনি মনে রাখেন।”
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল নিয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নিশানায় অমর্ত্য সেন। আর এই ইস্যুতে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক মহল। সোমবার জমির নথি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ওই জমির মালিক অমর্ত্য সেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জোর করে সেই জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এদিন রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য।
এদিন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যে কীভাবে কাগজ তৈরি হয়, সেটা সবাই জানে। ওই নথি বিশ্বাস করি না। যে কাগজ দেখানো হয়েছে, তার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।” কেন এমন কথা বললেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন উপাচার্য। জানান, রাজ্য যে কাগজ দেখাচ্ছে সেটা অর্মত্য সেনের বাবার সময়কার। ২০০৬ সালে জমি মিউটেশন করা হয়েছে অমর্ত্য সেনের নামে। সেই সময় ১২৫ ডেসিমেল জমি মিউটেশন করা হয়। প্রতি ডেসিমেল জমির জন্য ৫ হাজার টাকা করে কর দিয়েছিলেন তিনি। সেইসময় তিনি যদি জানাতেন তাঁর কাছে ১৩৮ ডেসিমেল জমি রয়েছে, সেই অনুযায়ী কর নেওয়া হত। একইসঙ্গে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের দাবি, “এ নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে জমির মাপজোক করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকুন, অর্মত্য সেন থাকুক, আমরাও থাকি। তাহলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
সোমবার বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সেই প্রেক্ষিতে বিদ্য়ুৎ চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আমাকে আক্রমণ করেছেন, তাতে তাঁর বোঝা উচিত বিশ্বভারতীর উপাচার্য ঠিক করে কেন্দ্রীয় সরকার। পুরো বিষয়টিতে বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেনের ক্ষতি হচ্ছে।” পালটা কুণাল ঘোষ বলেন, “বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনকে কেন্দ্র করে যে অনভিপ্রেত বিতর্ক তৈরি করেছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিস্তারিত বলেছেন। পারিবারিক ডকুমেন্ট নিয়ে বলেছেন। এর পর আবার উপাচার্য নিজে বিতর্ক তৈরি করলে তা দুঃখজনক। এর মধ্যে ঢুকতে চাই না।”
প্রসঙ্গত, শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) ১৩৮ ডেসিমেল জমির উপর ‘প্রতীচী’ নামের বাসভবন তৈরি করেছিলেন অমর্ত্য সেনের দাদু, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ক্ষিতিমোহন সেন। সেটা রবীন্দ্রনাথের আমলেই। এখন এই বাড়ির জমি নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক উসকে দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, নিয়মানুযায়ী, ১২৫ ডেসিমেল জমি লিজ দিয়ে সেসময় বিশ্বভারতীর কর্মী, আধিকারিকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খুব কম সময়ের জন্য হলেও ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। সেই হিসেবে তিনিও ওই জমির অধিকারী। এখন বিশ্বভারতীর দাবি, ১২৫ ডেসিমেলের জায়গায় যে ১৩৮ ডেসিমেল জমির উপর দাঁড়িয়ে ‘প্রতীচী’, অতিরিক্ত সেই ১৩ ডেসিমেল জমিটি বেআইনিভাবে অধিকৃত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.