সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস৷ বিশ্বভারতীর সংস্কৃতিতে কালি ছিটিয়ে প্রকাশ্যে এসেছিল অধ্যাপকদের ‘লুঙ্গি ডান্স’ বিতর্ক৷ সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ছড়িয়ে পড়েছিল ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও৷ বিতর্ক ধামাচাপা দিতে তাৎক্ষনিক বিবৃতিও দিতে হয়েছিল বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেনকে৷ সংবাদমাধ্যমে বিবৃত দিয়ে বিতর্ক ঢাকার চেষ্টা চললেও অবশেষে গোটা ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷ ঘটনায় দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে নির্দেশিকা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশিকাও জারি হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যে যাতে কোনওভাবেই আঘাত না লাগে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে বলে খবর৷ একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কেন্দ্রগুলিকেও নিয়ম নীতি মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ভবনে ‘লুঙ্গি ডান্সে’র ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে৷ ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে৷ ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেবিষয়ে প্রতিটি বিভাগকে সতর্কও করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে খবর৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হিন্দি গানের সুরে অধ্যাপকদের নাচকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যজুড়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবিও উঠতে থাকে৷ কিন্তু, কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পালটা যুক্তি দেওয়া হয়৷ বিশ্বভারতীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন জানিয়েছিলেন, নাচ-গান নয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছিলেন শিক্ষকরা৷ তাই এই ঘটনা৷
[কলেজে জেনারেটর ব্যবহারে ঝামেলা, অভিযোগ টিএমসিপির বিরুদ্ধে]
কিন্তু, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে অধ্যাপকদের ‘লুঙ্গি ডান্স’ গরিমা বাড়িয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের? বোলপুরের শান্তিনিকেতনে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। শুধু পরীক্ষায় পাশ-ফেল নয়, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা, তেমনই ইচ্ছা ছিল কবিগুরুর। তাই চার দেওয়ালের মধ্যে নয়, শান্তিনিকেতনে খোলা মাঠে পঠনপাঠন চালু করেছিলেন তিনি। সেই রীতি মেনেই আজও ক্লাস হয় বিশ্বভারতীতে। এমনকী, সমাবর্তনে শংসাপত্রের সঙ্গে পড়ুয়াদের দেওয়া হয় ছাতিম গাছের পাতা। যা সপ্তপর্ণী নামে পরিচিত। কিন্তু, বিশ্বভারতীর অন্দরে ‘অপসংস্কৃতি’ সত্যিই কি মানানসই?
[ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে রহস্য মৃত্যু নদিয়ার শ্রমিকের]
প্রতি বছরই শিক্ষক দিবসে বিশ্বভারতীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পড়ুয়ারাই। অনুষ্ঠানে অংশ নেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাও। তেমনই একটি অনুষ্ঠান ঘিরে তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ভিডিও। জানা গিয়েছে, শিক্ষক দিবসের দিন সংগীত ভবনে একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করেছিলেন পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানে শামিল হন ভবনের অধ্যক্ষ-সহ অধ্যাপকরা৷ কিন্তু, সেই অনুষ্ঠানে ‘লুঙ্গি ডান্স’ করতে দেখা যায় পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাচের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়। স্তম্ভিত হয়েছিলেন প্রবীণ আশ্রমিকরাও। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা স্বীকার করেননি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সবুজকলি সেন। তাঁর সাফাই, চটুল হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ নয়, সংগীত ভবনের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছিলেন৷ তবে, বিতর্ক ঢাকার চেষ্টা চললেও প্রায় দু’মাস পর অবশেষে পদক্ষেপ নিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.