ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: বিমল গুরুংয়ের বাড়িতে অভিযানের পর পাহাড়জুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি জারি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। নতুন করে মোর্চা সমর্থকদের অগ্নিসংযোগ একাধিক সরকারি অফিসে। রাজ্য সরকারের অফিসে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর পাশাপাশি এবার তাদের নিশানায় কেন্দ্র সরকারের সম্পত্তিও। রেল স্টেশন এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আগুন ধরিয়ে কেন্দ্রকেও ঘুরপথে বার্তা দিল মোর্চা। দিল্লি দরবারের পরও, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কোনও ইঙ্গিত না পাওয়ায় মোর্চা নেতৃত্ব চরমপন্থায় হাঁটল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দলের সভাপতির বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি। প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রত্যাঘাত শুরু করে মোর্চা সমর্থকরা। মধ্য রাতে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় চলে মশাল মিছিল। এইসব মিছিল থেকে নতুন করে আগুন জ্বলল পাহাড়ে। হাতে মশাল পেয়ে মোর্চা সমর্থকরা অতি উৎসাহী হয়ে পড়েন। সামনে তারা যা পেয়েছেন তাতেই আগুন ধরিয়ে দেন। রাতভর মোর্চার তাণ্ডবে জ্বলতে থাকে পাহাড়ের একের পর এক সরকারি অফিস। দার্জিলিংয়ের লোধামা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কালিম্পংয়ের তারখোলায় বন দফতরের গেস্ট হাউস বা মিরিকের পহেলগাঁওয়ের পঞ্চায়েত। একের পর অফিস পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এবার কেন্দ্র সরকারের সম্পত্তিও মোর্চা নিশানা করেছে। মশাল মিছিল থেকে গয়াবাড়ি স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রিমডিকে গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও চলে মোর্চার তাণ্ডব। পাহাড়ে আন্দোলন করেও দাবি আদায়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি গুরুং বাহিনী। রোশন গিরি দিল্লির দৌত্যতেও গোর্খাল্যান্ড নিয়ে শুকনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই পায়নি মোর্চা। এই অবস্থায় কেন্দ্র সরকারের সম্পত্তি ধ্বংস করে ঘুরপথে দিল্লিকে বার্তা দিল বিমল গুরুংয়ের দল। এমনই ধারণা পাহাড় বিশেষজ্ঞদের। অনির্দিষ্ট কাল বনধ ডাকার সময় বিমল গুরুং হুঁশিয়ার দিয়েছিলেন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। দলের সর্বোচ্চ নেতার কথা মতো কাজ শুরু করে দিল মোর্চা সমর্থকরা। প্রসঙ্গত, পাহাড়ের বিভিন্ন জল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রায় ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। যে বিদ্যুৎ পাহাড় থেকে চলে যায় সেন্ট্রাল পাওয়ার গ্রিডে। সেখান থেকে কিছুটা এ আসে রাজ্যে। প্রতি বছর, ১৫ জুনের পর থেকে ইউনিটগুলি থেকে উৎপাদন শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার মুহূর্তে মোর্চার এই তাণ্ডব কেন্দ্রকে এক ধরনের হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
মোর্চার তাণ্ডবের দিনে আরও কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। পাহাড়ের পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে ৭ জন আধিকারিক যাচ্ছেন দার্জিলিংয়ে। যাঁদের মধ্যে চারজন আইপিএস অফিসার ও তিনজন ডাবলুপিএস অফিসার। আরও তিন কলাম সেনা পাঠানো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.