তন্ময় মুখোপাধ্যায়: বাংলা জুড়ে উৎসবের মরশুম। বাড়ির পুজোর নিরিখে সর্বজনীন বা বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা এখন অনেকটাই বেশি। তবে এই বারোয়ারি প্রথম পুজো শুরু হয়েছিল গুপ্তিপাড়ায়। অবিভক্ত বাংলাকে পথ দেখিয়েছিল হুগলি নদীর তীরের এই প্রত্যন্ত গ্রাম। জগদ্ধাত্রী পুজোর মাধ্যমে প্রথম সর্বজনীন পুজো আত্মপ্রকাশ করেছিল।
[সাবেকি প্রতিমার সঙ্গে থিমে সুন্দর ষষ্ঠীতলা বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী]
হুগলি গেজেটিয়ার বলছে ১১৫৯ বঙ্গাব্দে শুরু হয় গুপ্তিপাড়ার এই মাতৃ আরাধনা। এখানে জগদ্ধাত্রী বিন্ধ্যবাসিনী নামে পূজিতা হন। বারোয়ারি পুজোর সূচনা এলাকার প্রবীণরা বলেন, আগে জমিদার, রাজবাড়ি বা বনেদি বাড়িতে পুজো হত। সেবছর স্থানীয় যুবকরা দুর্গা ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন গুপ্তিপাড়ার এক জমিদারবাড়িতে। কোনও কারণে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এরপরই গ্রামের প্রগতিশীল মানুষরা বসে ঠিক করেন যেহেতু দুর্গাপুজো শেষের পথে তাই জগদ্ধাত্রী পুজো নিজেদের মতো শুরু করা হবে। বারো জন বন্ধু অর্থাৎ ইয়ার একসঙ্গে মাতৃ আরাধনার সূচনা করেন। সেই থেকে বারোয়ারি শব্দের চল। গুপ্তিপাড়া বিন্ধ্যবাসিনী মা আজও একইভাবে পূজিতা হন। এখানে শুধু নবমীতে পুজো হয়। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী একইদিনে পুজো সারা হয়। সাত্ত্বিক, তামসিক ও রাজসিক মতে হয় মাতৃ আরাধনা। বিন্ধ্যবাসিনীর মূর্তি সাবেকি। প্রতি বছর প্রতিমা তৈরি করেন স্থানীয় শিল্পী বাবু পাল। এলাকার বাসিন্দারা চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করেন। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা পুজোর জন্য অনুদান পাঠান। এবার পুজোর খরচ প্রায় ২ লক্ষ টাকা। দশমীর দিন বাজি পোড়ানো হয়। আলো এবং পুজোর ইতিহাসের টানে কয়েক হাজার দর্শনার্থীর এই পুজোয় আসেন। হাওড়া-কাটোয়া লাইনে গুপ্তিপাড়া স্টেশন থেকে বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ। কাছেই হুগলি নদী।
[‘আরাধনা’ দেখেই জগদ্ধাত্রী বন্দনার আয়োজন কৃষ্ণনগরের জজকোর্ট পাড়ায়]
গুপ্তিপাড়ায় ছড়িয়ে ইতিহাসের অজস্র আকর। জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি। বাংলার অন্যতম প্রাচীন রথযাত্রা। রঘুনাথ জিউয়ের আশ্রম, সর্বমঙ্গলা কালীমন্দির। বছরভর বহু দেশি, বিদেশি পর্যটক আসেন। তবু কেন এতদিনে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সেভাবে গড়ে উঠল না হুগলির এই প্রান্তিক জনপদ? কেন এখনও গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির বছরভর কার্যত অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকে? গুপ্তিপাড়া পর্যটন উন্নয়ন কমিটি এই নিয়ে অনেক দৌড়োদৌড়ি করেছে। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ নাগ জানান, বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা শীঘ্র ঘোষণা হবে। মন্দিরের পিছনের জায়গায় ইকো পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। করা হবে গেস্ট হাউস। মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করার পাশাপাশি পথের দু ধারে আলো বসানো হবে। গুপ্তিপাড়ার আলাদা তোরণ তৈরি হবে। গুপ্ত শহর আপাতত নতুন ভোরের অপেক্ষায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.