নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: ‘নতুন খাল বন্ধ করে ফিরিয়ে দাও আমাদের পূরানো খাল।’ এমনই দাবি তুলে বিক্ষোভে সোচ্চার হল বসিরহাটের নলকোড়া খালপাড়ের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস আগে সেখানকার কোনও কোনও ইটভাটার ব্যবসায়ীরা চোঙ্গরআটি খালটি বন্ধ করে অবৈধভাবে স্লুইস গেট ভেঙে নতুন খাল কেটেছে। ফলে ওই খালের পাশে থাকা মাটি ফেটে জোয়ারের সময় আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নোনা জলে প্লাবিত হচ্ছে। খালের উপর তৈরি সেতুর একটা অংশ বিপদজনক ভাবে ধসে গিয়েছে। ফলে যে কোন মুহূর্তে তা ভেঙে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এটাই আশঙ্কা৷
এ বিষয়ে বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘ইছামতী নদীর সঙ্গে সংযোগকারী স্লুইস গেট ভেঙে নতুন যে খালটি কাটা হয়েছে, তাতে জলের তোড়ে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট এক ব্লকের দু’নম্বর ওয়ার্ড এবং শাঁকচুড়ো-বাগুন্ডি পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া চোঙ্গরআটি খালটি দীর্ঘ বছরের পুরনো। ওই খাল দিয়ে নলকোড়া, গজালআটি, বাঁশঝাড়ি, মল্লিকপাড়া, গোলবাগান-সহ কয়েকটি গ্রামের জল ইছামতীতে পড়ে। গত কয়েক মাস আগে পুরনো খালটি বন্ধ করে সেখানে নতুন খাল কাটা হয়।
রবিবার নলকোড়া খালপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও বড় গর্ত হয়ে খালের জল হু হু করে গ্রামের মধ্যে ঢুকছে। কোথাও খালের উপর সেতুর একাংশ বিপজ্জনকভাবে ধসে গিয়েছে। খালের জলে আশপাশের ঘর-বাড়ি, দোকান সব জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। চাষের জমি, পুকুর সহ স্থানীয় গোয়ালপাড়ায় বিএসএফ জওয়ানদের ক্যাম্পের মধ্যেও নোনা জল ঢুকে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে খালের জলে ডুবতে বসেছে গ্রাম।
ইতিমধ্যে নোনা জল ঢুকে বিঘার পর বিঘা ফসলের খেত এক হাঁটু জলের তলায় চলে গিয়েছে, তা দেখিয়ে কুতুবুদ্দিন গাজি, রহিম বক্স গাজি বলেন,‘‘কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে ইটভাটা করতে গিয়ে নদীর সঙ্গে সংযোগকারি স্লুইস গেটটি ভেঙে নতুন খাল কেটেছে। স্লুইস গেট না থাকায় জলের চাপে খালের পাশের বাঁধ ধসে আশপাশের গ্রাম সহ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ার লাগলে ঘরের ভিতর জল ঢুকে যাচ্ছে।’’ সাহিদা বিবি, রোকেয়া বিবি, আঁখিরতন বিবি, আসুরা বিবি বলেন, ‘‘ঋণ করে লিজে জমি নিয়ে চাষ করা খেতের ফসল নোনা জলে নষ্ট হতে বসেছে। ঘরের মধ্যে পোকা, সাপ ঢুকে পড়ছে। নোনা জলের চাপে শুকনো কাট ভিজে যাওয়ায় রান্নার করতে বড় রকম অসুবিধা হচ্ছে।’’
স্লুইস গেট না থাকায় যে গতিতে জল ঢুকছে তাতে যে কোন মুহূর্তে খালের দু’পাশের বাঁধ ভেঙে গ্রামকে গ্রাম ভেসে যাওয়া আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করে সহিদুল গাজি,মোমিনুর গাজি বলছেন, ‘‘ইটভাটা হোক, তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু এভাবে গ্রামের মানুষের অসুবিধা করা চলবে না। তাই আমাদের দাবি ফিরিয়ে দেওয়া হোক আমাদের পুরনো খাল।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যের স্বামী দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘‘কয়েকজন ইটভাটা ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে বৈআইনি ভাবে স্লুইস গেট ভেঙে খাল কাটায় গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.