পলাশ পাত্র, তেহট্ট: আলোয় সেজেছে গোটা রাজ্য। বাদ যায়নি নদিয়ার বেলপুকুরের বাচস্পতিপাড়ায় শ্রীচৈতন্যের মামার বাড়ির গ্রামও। শ্যামা আরাধনায় ব্যস্ত ওই গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির সদস্যরা। বৈষ্ণব ধর্মের প্রসারকে রুখতে তাঁর মামার বাড়ির গ্রামে পুজো শুরু হয়। আজও অটুট সেই নিয়ম। এই দেবীর মাহাত্ম্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
শ্যামা আরধনায় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে টাইম মেশিনে চড়ে আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে সুদূর অতীতে। ইতিহাস বলছে, শ্রীচৈতন্যের মা শচীদেবী নদিয়ার ধুবুলিয়া থানার বেলপুকুরের বাচস্পতি পাড়াতেই জন্ম নেন। সে সূত্রেই ছোট থেকে মামার বাড়িতে যাতায়াতও ছিল শ্রীচৈতন্য। একসময় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারে মন দেন মহাপ্রভু। তবে বৈষ্ণব ধর্মের বাড়বাড়ন্ত ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি নদিয়ার নদিয়ার তৎকালীন রাজা রুদ্র রায়। কীভাবে বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার রোখা যায় সেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেন তিনি। ঠিক এমন সময় দেবদারু-সহ নানা বড় গাছে জঙ্গলে ঘেরা বেলপুকুর গ্রামে আসেন ঢাকার বিক্রমপুর কনকসার কালীসাধক রামচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি পঞ্চমুন্ডের আসনে বসে মহাশঙ্খ বা জপমালা নিয়ে সাধনা করতেন। কালীমন্দির তৈরি করতে নদিয়ার রাজা রুদ্র রায় রামচন্দ্রকে জমি দান করেন। বৈষ্ণব ধর্মের বাড়বাড়ন্ত তাঁর হাত ধরেই গ্রামে কালীপুজো শুরু হয়। অমাবস্যার রাতে অপমৃত্যু হওয়া সধবা চন্ডালের আঙুলের কর, নাড়ি দিয়ে তৈরি হত দেবীর মহাশঙ্খের মালা। সেই মালা ও মাথার খুলি আজও রয়েছে ভট্টাচার্য বাড়িতে। মহাশঙ্খর মালাটি খুলিতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। রামচন্দ্র ভট্টাচার্যের শুরু করা এই কালীপুজোর নিয়মে আজও কোনও ছেদ পড়েনি। তাঁর সন্তানদের পুজো বড়, মেজো, সেজো, ন’বাড়ির পুজো নামে বিখ্যাত হয়েছে।
ন’বাড়িতে আজও রয়েছে মহাশঙ্খ মালা। বলির পর ওই মালায় মদ দেওয়া হয়। একাধিক বোতল থেকে মদ ঢাললেও মহাশঙ্খ মালা তা শুষে নেয়। এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মানুষ ভট্টাচার্য বাড়িতে ভিড় জমান। এই পুজো হয় তান্ত্রিকমতে। তাই বলির প্রচলন আজও রয়েছে। ভোগে শোল মাছের চাটনি, ইলিশ, মাংস দেওয়া হয়। সরাইয়ে বলির গলা শুদ্ধ ছাগলের কাটা মাথা, চুঁইয়ে পড়া রক্তের সঙ্গে কলা মিশিয়ে ভোগও দেওয়া হয়। নানা ভাজা, তরকারি, পোলাও, পায়েসও থাকে। এছাড়া একসঙ্গে পাঁচশোর বেশি মদের বোতল ভোগ হিসাবে দেবীকে নিবেদন করা হয়। মায়ের আরাধনার এলাহি আয়োজনে শামিল হন গ্রামবাসীরাও। তাঁদের কথা অনুযায়ী, দুর্গাপুজোর পরিবর্তে এই গ্রামের মানুষ কালী পুজোতেই বেশি আনন্দ পান। তাই তো সারাবছর এই কয়েকটা দিনের অপেক্ষাতেই বছর কাটে সকলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.