সাবিরুজ্জামান, লালবাগ: দীপাবলিতেও অন্ধকারে ডুবে থাকল জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়ি। প্রদীপ জ্বলল না নিহতের গ্রামের পুজোতেও। কিন্তু গত বছর দীপাবলিতেই আলোর রোশনাইয়ে ভেসে গিয়েছিল জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকার বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়ি। ছাদ থেকে ঝোলানো আধুনিক টুনি বাল্বের আলোক শিখা চুঁইয়ে পড়ছিল মাটিতে। বাড়ির ছাদের পাঁচিলে সার দেওয়া মাটির প্রদীপ মোহময় করে তুলেছিল শিক্ষকের বাড়ির পরিবেশকে। অথচ দশমীর পর থেকে ২০ দিন পেরিয়ও নিষ্প্রদীপ সেই আলো ঝলমলে বাড়ি।
এবছরের পুজো সম্পূর্ণ আলাদা। আলোর উৎসবের রাতেও বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়িতে জ্বলেনি একটিও প্রদীপ। তার বদলে তালা বন্ধ বাড়িটিকে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ আটকাতে পালা করে চার-পাঁচ জন পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। এই ব্যাপারে জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা সুবোধ সরকার বলেন, “দশমীর দিন থেকেই এলাকাকে শোক গ্রাস করেছে। দীপাবলিতেও তার রেশ কাটেনি। ওই শোক ভুলে আলোর উৎসবে মেতে উঠতে পারেননি লেবু বাগানের বাসিন্দারা।” সেই কারণেই কোনওরকমে কালীপুজো করা হয়েছে বন্ধুপ্রকাশের বেড়ে ওঠা সাগরদিঘি থানার সাহাপুর গ্রামে। জানা গিয়েছে, শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির উলটো দিকে সাহাপুর গ্রামে মা কালীর থান রয়েছে। সেখানে তাঁর উদ্যোগেই এতদিন কালীপুজো হয়ে এসেছে গত বছরও সপরিবারে জিয়াগঞ্জ থেকে সাহাপুর গ্রামে ওই শিক্ষক পুজার আয়োজন করেন। নিজের বাড়ি তো বটেই, এলাকা সাজিয়ে দিয়েছিলেন রঙিন সব আলোকমালায়।
এই প্রসঙ্গে বন্ধুপ্রকাশের ছোটবেলার বন্ধু টুটু মিত্র বলেন, “ও কালীপুজোর দিনে মোমবাতি আর মাটির প্রদীপ জ্বালাতে খুব ভালবাসত। আবার ওর উদ্যোগেই পাড়াতে পুজো হত। নিয়ম মেনে এবারও পাড়ায় পুজো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে নেই কোনও আড়ম্বর। জ্বালানো হয়নি মোমবাতিও।” এদিকে মৃতের মা মারারানি পাল বলেন, “এখন থেকে পুজো মানেই তো আমাদের কাছে শোক আর অনুতাপ। ছেলে হারানোর ব্যথা তাই আমাকে চিরদিন অন্ধকার করেই রাখবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.