রাজা দাস, বালুরঘাট: নিজের দেশ ভারত। কিন্তু সীমান্তের ওপারে থাকা মানুষগুলোর না এমুখো, না ওমুখো হওয়ার মতো অবস্থা। হাজারও সমস্যা লেগেই থাকে তাঁদের। কাকে বলবেন,কে-ই বা শুনবে তাঁদের কথা? ভোটাধিকার ভারতে হলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা। তাই দু’পারের ভালমন্দ মিশিয়েই কাটছে জীবন৷
বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ একটা সমস্যা ছিলই দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের হাঁড়িপুকুরে। পূর্বে ক্ষমতাসীন সরকার কথা দিয়েও কথা রাখেনি। কিন্তু দিদি রেখেছেন বলে দাবি গ্রামবাসীদের। তাই বছর কয়েক ধরে ওই গ্রামের মানুষদের মুখে শাসক দলের জয়জয়কার। ভোটের হাওয়ায় তৃণমূল সরকারের নামই ভাসছে এই গ্রামে। আর তাই লোকসভা ভোটের মরশুমে নিজেদের গ্রামে তাঁরা প্রচারের সুযোগ দিয়েছেন শুধুমাত্র তৃণমূলকেই। শহর,নগর তো বটেই, প্রযুক্তির ছায়া ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে সব জায়গায়। আর এই বিদ্যুৎ সংযোগই বদলে দিয়েছে হিলির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে হাঁড়িপুকুরের গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। যার জন্যে কাঁটাতারের ওপারে থাকা ভারতীয় ভূখণ্ডের এই গ্রামে তৃণমূলের পাল্লা অনেকটাই ভারী।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখে গান্ধীগিরির সুর বীরভূমের তৃণমূল সভাপতির গলায়!]
আন্তর্জাতিক সীমারেখার নানা অজুহাত দেখিয়ে বামেদের সময়ে বিদ্যুৎসংযোগ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেনি কেউ। কিন্তু, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় ফিরতেই, কাঁটাতারের ওপারে থাকা গ্রামটি প্রতিশ্রুতির আলোয় ভরে উঠেছে বলেই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ২৫২ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমারেখায় মধ্যে হিলি ব্লকের হাঁড়িপুকুর, তেলিয়াপাড়া, উজাল, গোবিন্দপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁটাতারের ওপারে। যোগাযোগ, পঠন-পাঠন, বিদ্যুতের চরম সমস্যা এই গ্রামগুলিতে। নিজের দেশ বলতে ভারতের মূল ভূখণ্ড। ভারতে যাতায়াত কিংবা যোগাযোগ যতটা কঠিন, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ততটাই সহজ। কেননা, কাঁটাতারের ওপারে থাকা ভারতীয় ভূখন্ড এবং বাংলাদেশি গ্রামগুলোর মাঝে নেই কোনও বেড়া বা বাঁধন। স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের গ্রামগুলির মধ্যে যোগাযোগ যে মুক্তাঞ্চল, তা বলাই শ্রেয়। হিলিতে এইরকম একটি গ্রাম হাঁড়িপুকুর। সেখানে বিদ্যুতের দাবি বরাবরের।
হাঁড়িপুকুরে থাকা আড়াইশো পরিবারের সেই দাবিতে ছাই চাপা পড়েছিল এতদিন। ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সীমারেখার নানা অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়ত রাজ্যের তৎকালীন বাম এবং কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার, এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তবে বর্তমানে চেহারাটা আলাদা। স্থানীয়দের দাবী, তৃণমূল সরকার শাসনে আসায় একটু হলেও পালটেছে চেহারা। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে একমাত্র তৃণমূল সরকারকেই। গ্রামটিতে বিদ্যুৎ না থাকার গল্প তাদের কাছে আজ ইতিহাস।
[আরও পড়ুন: হাত বাঁচাতে চিকিৎসকের পরামর্শেই গ্লাভস, বিতর্কের জবাব মিমির]
স্থানীয় বাসিন্দা, নুরুল ইসলাম, আনারুল শেখ, মানিক শেখ জানান, গ্রামে ভোটার সংখ্যা ২৮০-র কাছাকাছি। সকলেই তৃণমূল মনোভাবাপন্ন। কেননা, ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই সুফল মিলতে শুরু করেছে তাদের প্রত্যন্ত গ্রামেও। রাস্তাঘাট তো বটেই বিদ্যুতের সংযোগও মিলেছে এই সরকারের আমলেই। একটা সময় গ্রামের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকেই। নিজেদের ‘ভারতীয়’ বলতে অপমানবোধ হত তাঁদের। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উন্নয়নশীল কাজের প্রভাব আটকাতে পারেনি কোনও কাঁটাতারকেই। স্বভাবতই, গ্রামে ভোটের হাওয়া তৃণমূলের দিকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.