শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: রাজনৈতিক সংঘর্ষে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি৷ মঙ্গলবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় তিলোত্তমায়৷ সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র৷ এই ঘটনায় বিস্মিত গোটা গ্রাম৷ ক্ষোভে ফুঁসছে বিদ্যাসাগরের বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দারা৷
ঘাটালের ছোট্ট গ্রাম বীরসিংহ৷ যে গ্রাম সম্পর্কে হয়তো বেশিরভাগ মানুষই জানতেন না৷ কিন্তু ১৮২০ সালে জন্ম নেওয়া বিদ্যাসাগরের মাধ্যমে তা পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের দরবারে৷ সেই গ্রামেরই জ্যোতিষ্কের অপমান৷ মঙ্গলবার সন্ধের সেই ঘটনার খবর কলকাতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের বীরসিংহ গ্রামে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি৷ বুধবার সকাল থেকে গ্রামের আনাচে-কানাচে জটলা৷ পাড়ার দোকানগুলিতেও চলছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর নিয়ে আলোচনা৷ সময় যত গড়াচ্ছে ক্ষোভের পারদ চড়ছে ততই৷ প্রায় সকলেই বলছেন, ‘‘কলকাতার বুকে বিদ্যাসাগরকে খুন করা হয়েছে৷’’ অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা৷
শোকে পাথর বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গড়ে ওঠা বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁর বর্ণপরিচয় পড়ে তামাম বাঙালি সমাজ আজ বড় হয়েছে৷ যিনি আজ আমাদের সকলকে শিক্ষার পথ দেখিয়েছেন৷ সেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল কলকাতার বুকে৷ এই ঘটনাকে খুনই বলা যায়৷’’ বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দা ইতিহাসের শিক্ষিকা নবনীতা ঘোষের গলাতেও একই সুর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই৷ আমাদের লজ্জা আমরা বিদ্যাসাগরকে বাঁচাতে পারলাম না৷ ইতিহাস খুনীদের ক্ষমা করবে না৷’’ এই ঘটনাকে মানতে পারছেন না বিদ্যাসাগরের বাড়ির কেয়ারটেকারও৷ তাঁর গলাতেও আক্ষেপের সুর৷
বহু মানুষই এদিন ভিড় জমান বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয়৷ সেখানেই বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধার্ঘ জানান গ্রামবাসীরা৷ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা আমাদের ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত ছাড়া যে আর কিছুই নয়, সেকথা যেন গোটা গ্রামজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে৷ নারীশিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন যিনি, তাঁর আবক্ষ মূর্তি ভাঙচুরে লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছেন মহিলারা৷ শান্ত গ্রামে যেন ধিকধিক করে জ্বলছে প্রতিবাদে আগুন৷
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.