ছবিতে বুকে করে ইট বইছে খুদে পড়ুয়ারা
সাবির জামান, লালবাগ: প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুকে জগৎ চেনার প্রথম পাঠ দেয়। মায়ের আদর-শাসনের পরিধি টপকে সেই তো প্রথম বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ। সেই শিক্ষার শুরু যদি ভুলপথে চালিত হয়, তবে শিশুর ভবিষ্যৎ তো অনাদরে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম যদি হেলায় লালিত হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। সেই অন্ধকারই গ্রাস করল জিয়াগঞ্জের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। ছোট ছোট হাত অচেনাকে জানার বদলে ইট বইছে। শিক্ষকদের প্ররোচনায় স্কুলে শিশুশ্রম। স্কুলের নির্মাণ কাজে পড়ুয়াদের দিয়ে শ্রমিকের কাজ করানোর অভিযোগ। বুকে করে ইট বইতে দেখা গেল কচিকাঁচাদের। এই ঘটনায় অভিযোগের তির স্কুলেরই শিক্ষকদের দিকে। অভিভাবক-সহ স্কুল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত। যদিও শিশুদের বুকে করে ইট বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। তবে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। নির্দেশ মেনে শিক্ষকদের গা-ও টিপে দেয় পড়ুয়ারা। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে শিক্ষকদের দাবি, খেলার ছলে মনের টানে খুদে পড়ুয়ারা এমন কাজ করেছে। এহেন ঘটনার পর রীতিমতো প্রশ্নের মুখে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের মুকুন্দবাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত বিধান কলোনি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জানা গিয়েছে, আদিবাসী স্কুলটিতে শৌচালয় নির্মাণের কাজ চলছে। ওই নির্মাণে বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের দিয়েই শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত রাজমিস্ত্রিদের ইট জোগানের কাজে লাগানো হয়েছে পড়ুয়াদের। পড়ুয়ারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজনের ইট বুকে টেনে নিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে রাজমিস্ত্রির হাতে। স্কুলের পোশাক পরেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলেদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের শরীরে ম্যাসাজ থেকে বিদ্যালয়ে ঝাঁট দেওয়ার কাজও করানো হয়েছে পড়ুয়াদের দিয়ে। কোনও কোনও শিক্ষক আবার বিষয়টিকে সৃজনশীল কাজ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
অভিভাবক সুব্রত মণ্ডল, অসীম হাজরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার এই ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার বাচ্চাদের দিয়ে যেভাবে ইট বহনের কাজ করানো হল, তা অমানবিক ও গর্হিত কাজ। আমরা এর বিচার চাই।’ বাসিন্দাদের দাবি, এক-একজন বাচ্চাকে সাত-আটটি করে ইট একসঙ্গে বইতে দেখা গিয়েছে। শিক্ষকদের ভয়েই তারা এই কাজ করেছে। এই প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ভোটার তালিকার কাজে চরম ব্যস্ত। তবে খোঁজ নিয়ে যেটুকু জেনেছি, কোনও শিক্ষক শিশুদের ওই কাজ করতে নির্দেশ করেননি। বরং শিশুরা শৈশবের উচ্ছ্বাসে খেলার ছলে ইট বহন করেছে।’ নৈতিকভাবে এই কাজ নাকি তিনি সমর্থনও করেন না। যদিও বাচ্চাদের দিয়ে ইট বহনের কাজ করানোর বিষয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে জিয়াগঞ্জ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মৌমিতা সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। শিক্ষকদের তলব করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.