Advertisement
Advertisement

Breaking News

বনহুগলিতে ভেন্টিলেটর তৈরি

আগ্নেয়াস্ত্রের বদলে তৈরি হবে জীবনদায়ী ভেন্টিলেটর, নয়া দিশা দেখাচ্ছে বনহুগলির কারখানা

চিকিৎসকদের সুরক্ষাবর্ম হিসেবে হেডশিট ও করোনায় রক্ত পরীক্ষার কিটের ছাঁচ তৈরি হচ্ছে এখানেই।

Ventilators will be made at MSME factory at Bonhooghly instead of arms
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 14, 2020 9:16 pm
  • Updated:April 14, 2020 9:19 pm  

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনায় কাবু রোগীদের চিকিৎসায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর। অথচ জীবনদায়ী এই ব্যবস্থার অভাব রয়েছে গোটা দেশে। সমস্যার সুরাহায় এবার কোমর বাঁধল দিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের উদ্যোগেই ভেন্টিলেশন যন্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই ‘সরকারি’ ভেন্টিলেটরের দাম হবে কম, টেকসই হবে বেশি। একটি যন্ত্র অন্তত তিন বছর ব্যবহার করা যাবে বলে আধিকারিকদের দাবি।

এই প্রসঙ্গেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার বনহুগলি। যেখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রকের (MSME) কারখানা। এতদিন সেখানে কামান-বন্দুকের গোলা,বারুদ তৈরি হয়ে এসেছে। এবার মানুষ মারার হাতিয়ারের বদলে বনহুগলির MSME-তে তৈরি হবে রোগবিনাশের অস্ত্র। মারমুখী করোনা ভাইরাসকে বাগে আনতে তারা জীবনদায়ী ভেন্টিলেটর বানানো হবে এই কারখানায়। এই মুহূর্তে চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষায় মাথাঢাকা হেডশিট তৈরি হচ্ছে এখানে। পাশাপাশি, যত বেশি সম্ভব করোনা রোগীকে চিহ্নিত করতে যাতে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করা যায়, সে জন্য কিট তৈরির ছাঁচও রূপ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু এবার এখানে তৈরি হবে জীবনদায়ী যন্ত্র।

Advertisement

[আরও পড়ুন: লকডাউন ভেঙে ত্রাণ বিলির অভিযোগ, সাংসদ জন বারলার বিরুদ্ধে মামলা পুলিশের]

মারণাস্ত্র থেকে মানব কল্যাণের হাতিয়ার। কর্মদ্যোগের চরিত্রে এমন উলটপুরান সংস্থার কর্মীদের মধ্যেও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। বনহুগলির কেন্দ্রীয় কারখানায় তৈরি হেডশিট ইতিমধ্যে বেশ কদর পেয়েছে চিকিৎসক মহলের কাছে। ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা এই অ্যাক্রেলিক পলিশিটের আবরণে সজ্জিত হয়ে করোনা রোগীদের পরিচর্যা অনেকটা সহজ হবে বলে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ। সংস্থার চিফ ম্যানেজার দেবদত্ত গুহ সোমবার বলেন, “আমাদের তৈরি হেডশিট সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার করে ওঁরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।” কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের যে প্লাস্টিকের ছাঁচ তারা বানাচ্ছে, তা দিয়ে মাসে অন্তত দেড় লক্ষ কিট বানানো সম্ভব। রক্ত পরীক্ষার কিট সহজলভ্য হলে করোনা-যুদ্ধে অনেকটা এগিয়ে থাকা যাবে। চলতি সপ্তাহের শেষে টেস্ট কিটের ছাঁচ তৈরি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

তবে এসবের চেয়েও বনহুগলির কারখানার গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে উঠতে পারে ভেন্টিলেটরের দৌলতে। ডাক্তারবাবুরা বারবার বলছেন, করোনায় জীবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বয়স্কদের।COVID-19 ভাইরাস তাঁদের নিউমোনিয়ার কালগহ্বরে ঠেলে দিতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে যা থেকে উঠে আসা কঠিন। বহু রোগীকে ভেন্টিলেশন সার্পোট দিতে হয়। এ দিকে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে রোগীর তুলনায় ভেন্টিলেটর কম। চিকিৎসার খরচও বাড়ে। করোনার প্রকোপ আরও বাড়লে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রের এই তোড়জোড়। দেবদত্তবাবু জানান, মন্ত্রকের সচিবের নির্দেশে সস্তায় ভেন্টিলেটর বানানোর প্রস্তুতি চলছে। নতুন ধরনের যে ভেন্টিলেশন যন্ত্র তাঁরা বানাবেন, সেগুলির সঙ্গে ‘আইওটি সেন্সর’ যুক্ত থাকবে, যার সুবাদে ডাক্তারবাবু নিজের চেম্বারে বসেই তাঁর অ্যান্ড্রয়েড ফোনে পেয়ে যাবেন রোগীর যাবতীয় তথ্য। উপরন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী যন্ত্রগুলি নিয়ন্ত্রিত নিয়ন্ত্রিত হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। অর্থাৎ, রোগীর হৃদযন্ত্রের অবস্থা অনুযায়ী ফুসফুসে পাঠানো অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো বা কমানো হবে। ঘরের বাতাসে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র ধুলিকণাও আটকে যাবে ভেন্টিলেটরের পাশে থাকা অন্য একটি যন্ত্রে। “অত্যাধুনিক ও সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির এই ভেন্টিলেটর অনেকটা ছাঁকনির কাজও করবে”, মন্তব্য চিফ ম্যানেজারের।

[আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে বাজারে মিলল না বাংলা ক্যালেন্ডার, দিনক্ষণ দেখতে ভরসা মোবাইলই]

সংস্থার এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, নয়া নকশার এই ভেন্টিলেশন যন্ত্রের অনুমোদন পেতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রির্সাচ (ICMR) এবং দিল্লির AIMSএ নমুনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলে মাসে গড়ে ১৮-২০টি ভেন্টিলেটর তৈরি হবে বনহুগলিতে। রাজ্যের সব কটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল চাইলে অর্ডার দিয়ে রাখতে পারে। একথা রাজ্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে বনহুগলির এই MSME.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement