ছবি: সুশান্ত পাল
নন্দন দত্ত: পাঁচ টাকাতেই মিলবে পেট পুরে সবজি ভাত। রোগীর আত্মীয়দের পাশে দাঁড়াতে রামপুরহাট হাসপাতালেই সাত জন যুবক এমন উদ্যোগে নেমে পড়লেন। অগ্নিমূল্যের বাজারে এমন উদ্যোগে হতবাক এলাকার মানুষ। আপাতত প্রতি শনিবার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সাত বন্ধু৷
‘দুর্গা মার রান্নাঘর’৷ সাত বন্ধুর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই রান্নাঘর কাম হোটেল। তাঁদের কেউ প্রাথমিক শিক্ষক, কেউ বেসরকারি কোম্পানির কর্মী, আবার কেউ ছাত্র। রোগীর আত্মীয়দের কথা ভেবেই আপাতত প্রতি শনিবার একদিন করে এই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। তা বলে পাঁচ টাকার বিনিময়ে ডাল ভাত সবজি! ভাবতে পারেননি অনেকে। প্রথম শনিবার খাবারের মেনুতে ছিল মিনিকেট চালের ভাত, মুগের ডাল, আলু সোয়াবিনের তরকারি, আমড়ার টক এবং পায়েস। চারশোর বেশি মানুষ প্রথম দিনেই অন্নসেবা গ্রহণ করেন। যে খাবার বাইরের হোটেলে ৩০ থেকে ৫০ টাকা লাগত৷
রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে মহকুমার পাঁচটি থানা এলাকা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং রাজ্যের প্রতিবেশী জেলা মুর্শিদাবাদের একটি অংশের মানুষ আসেন। হাসপাতালে রোগীদের খাবার দেওয়া হলেও সঙ্গে আসা আত্মীয়রা মুশকিলে পড়েন। তাই এগিয়ে এলেন সাত বন্ধু। তাঁদেরই একজন কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘এক অসুস্থ আত্মীয়কে হাসপাতালে এনে সেদিন দুপুরের খাবারের কী অসুবিধা তা উপলব্ধি করেছিলাম৷ এরপরেই পাড়ায় কয়েকজন বন্ধু ও ভাইদের সঙ্গে নিয়ে এই দুর্গা মার হোটেল শুরু করলাম। প্রথম দিকে আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে এই আয়োজন করতাম। আগামী দিনে বহু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’ কৃষ্ণর দাবি, এই খাবার বিনামূল্যেও দেওয়া যেত। কিন্তু সেই খাবার খেতে অনেকের আত্মসম্মান বোধে লাগত। তাই সামান্য মূল্য নেওয়া৷
শিক্ষক অভিজিৎ সাহা, ছাত্র প্রীতম ভকত, শুভম প্রসাদ, অরিজিত সাহা সকলেই উদ্যোগী। তাঁরা বলেন, “এটা ব্যবসা নয়৷ সেবা করতে এসেছি।” উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়ী নব্যেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসা করে আমাদের স্বচ্ছন্দে দু’বেলা চলে যাচ্ছে। ভাল কাজে তাই তাদের সঙ্গে জড়িয়ে পরলাম৷’’
শনিবারের দুপুরে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের রাখি হাজরা, পাইকড়ের আনসার শেখরা এমন সুযোগ পেয়ে লাইন দিয়েছিলেন। সকলেরই প্রশ্ন, এটা কতদিন চলবে। তবে সপ্তাহে একদিন হলেও সেটা যে মানবের জীব জ্ঞানে শিব সেবা হচ্ছে এটা ভেবেই খুশি রোগীর আত্মীয় থেকে হাসপাতালে আসা পরিজনেরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.