ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: সর্বভারতীয় স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং কমেছে অনেকটা। শিক্ষা মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আর ধারাবাহিক এই অবনমনের জন্য পড়ুয়া এবং অন্যান্য শিক্ষকদেরই দায়ী করলেন উপাচার্য। দায় চাপালেন প্রাক্তনীদের উপরও। অভিজ্ঞ মহলের মত, নিজে এতটুকুও দায়ভার নেবেন না বলেই এমন উলটো চাপ দিচ্ছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
সর্বভারতীয় র্যাঙ্কিংয়ে ২০১৬ সালে বিশ্বভারতী ছিল ১১-এ। ২০২০ সালে তা ৫০-এ নেমে এসেছে। এই অবনমন নিয়ে শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি সর্বভারতীয় স্তরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর আত্মপক্ষ সর্মথনে কলম ধরেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে নিজেদের দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্বভারতীকে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর কটাক্ষ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, টোটোচালক এবং সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বভারতী ‘সোনার ডিম’ পেড়ে চলেছে।
শনিবার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাঁর লেখা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে এই অবমনের জন্য মোট ১২টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, ইউজিসির নির্দেশ অনুসারে শিক্ষাকর্মীদের বিধিবর্হিভূত অতিরিক্ত বেতন আটকে দিয়েছেন, না হলে সবার বেতন বন্ধ হয়ে যেত। একইভাবে ভ্রমণ ভাতা নিয়ে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল, তা আটকানোর পাশাপাশি যাঁরা এই ভাতা গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে সেই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, একাধিক নেতিবাচক ঘটনার জেরে বিশ্বভারতীর খ্যাতি অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নোবেল চুরির পাশাপাশি একজন উপাচার্য এবং কর্মসচিব জেলে গিয়েছেন, একজন উপাচার্য পদচ্যুত হয়েছেন। এমনকী সম্প্রতি এক জন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, কর্মসচিব এবং আধিকারিক সাসপেন্ড হয়েছেন। এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, কর্মিসভার সদস্যদের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন, ঘেরাও হয়েছেন, পরিবারকেও এসবের জেরে হয়রান হতে হয়েছে। তবে সবশেষে উপাচার্য স্বীকার করে নেন, শৃঙ্খলা থেকে বিচ্যুত বিশ্বভারতীর শুদ্ধিকরণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যাবশ্যক কাজে মনোনিবেশ করে উঠতে পারেনি।
এখানেই দায় চাপানোর কাজে থেমে থাকেননি উপাচার্য। র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রাক্তনীদেরও। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করছেন না প্রাক্তনীরা। উপাচার্যের এই চিঠির তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তনী থেকে আশ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজদের অক্ষমতা ঢাকতে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চাইছেন। এই বিষয়ে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ”বর্তমানে বিশ্বভারতীকে নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই। শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্কৃতি শেষ হয়ে গিয়েছে। পুরনো গৌরব ফেরাতে কে হাল ধরবে, আমি জানি না। যা হচ্ছে তা খুব দুঃখজনক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.