অভিরূপ দাস: করোনা সঙ্গে লড়াই করার একমাত্র অস্ত্র টিকার যোগানে টান। উদ্বেগ বাড়িয়ে টিকাকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গের পরিবার কল্যাণ আধিকারিক বলছেন, “আরও ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কিন্তু তা কবে আসবে তা নিয়ে কিচ্ছু জানায়নি দিল্লি।”
ফলে আমজনতাকে দ্রুত বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে টিকা নিতে এসেছিলেন সাতশো জন। কিন্তু মাত্র আড়াইশো জনকে টিকা দিয়েই বন্ধ করে দিতে হয় প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আবার পরের দিন টিকাকরণ হবে। মঙ্গলবার এনআরএস হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে কয়েকশো লোকের লম্বা লাইন পড়ে। কিন্তু কখন টিকা পাবেন? তা জানেন না অনেকেই। চড়া রোদের মধ্যেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষমেশ ফিরে যেতে হয় অনেককেই। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টোর থেকে হাসপাতালে ভ্যাকসিন এসেছে দুপুর সাড়ে বারোটার পর। ভ্যাকসিন আসার পরেই আড়াইশো জনকে টোকেন দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন পাননি আজ বুধবার তাঁদের টিকা দেওয়া হবে।
শুধু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ নয়, ভ্যাকসিন নিয়ে এই হাহাকার জেলার হাসপাতালগুলিতেও। বারাসাত ১ নম্বর ব্লকের ছোট জাগুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও সকাল ন’টা থেকে টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শেষমেশ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তিনশোজন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, “আমার ৮৯ নম্বর স্লিপ। অথচ আচমকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালো ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এটা কি করে সম্ভব হল?”
ভ্যাকসিন ভোগান্তি প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগণা স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, সরবরাহ অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের কার্সিয়াং মহকুমা হাসপাতালেও টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ৪০০ জন। কিন্তু ভ্যাকসিন পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম। সূত্রের খবর এদিন ওই হাসপাতালে ১ হাজার ৫০০ টি ভ্যাকসিন এসেছিল। কিন্তু তাও কেন এত কম লোককে ভ্যাসকিন দেওয়া হল? আজব অজুহাত দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জবাব, যাতে শারীরিক দুরত্ব মানা হয়, তাই ২০০ জনের বেশি লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে করোনা ঠেকাতে ভ্যাকসিনকেই মূল অস্ত্র বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেখানে ভ্যাকসিন-ভোগান্তিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। ১ মে থেকে ১৮ উর্দ্ধদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। প্রশ্ন উঠছে এই যদি জোগানের অবস্থা হয়, সে সময় কি করে সামাল দেবে স্বাস্থ্যদপ্তর। মঙ্গলবারের বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, দিল্লি থেকে পাঠানো যৎসামান্য যে পরিমাণ টিকা মজুত রয়েছে বাংলার ভাঁড়ারে, তা দিয়ে জোরকদমে টিকাকরণ কোনওমতেই সম্ভব নয়। বহু কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে আগ্রহী লোকজন ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে অনাগ্রহ তৈরি হওয়ায় আশঙ্কিত চিকিৎসকরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.