অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: টানা ১৭ দিন সুড়ঙ্গের অন্ধকারে আটকে থাকার পর গত মঙ্গলবার উত্তরকাশী (Uttarkshi) থেকে উদ্ধার হয়েছেন আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। দীর্ঘদিন পর প্রকৃতির আলো-বাতাসের মাঝে এসে পড়েছেন বাংলার ৩ শ্রমিকও। আর মুক্তির পর তাঁদের কাছে ভিটের টান বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই টানে শুক্রবার বাংলায় ফিরেছেন কোচবিহারের(Cooch Behar) তুফানগঞ্জের মানিক তালুকদার। দিল্লি হয়ে বিমানে বাগডোগরায় নেমে আপনজনদের মুখ দেখে স্বভাবতই আনন্দ তাঁর বাঁধ মানছে না। বললেন, ”বাড়ি ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে।”
এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে আবারও কি যাবেন সুড়ঙ্গের কাজে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে যা বললেন মানিক, তা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। তাঁর কথায়, ”এখানে কাজ পেলে ভালো, না পেলে তো বাইরে যেতেই হবে। বউ-বাচ্চা আছে, তাদের তো খাওয়াতে হবে। কাজ না করলে খাব কী?” অর্থাৎ পেটের দায়ই এখন জীবনের বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর কাছে।
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে কাজ করতে গিয়ে ধসের কবলে পড়ে আটকে ছিলেন তুফানগঞ্জের বলরামপুরের শ্রমিক মানিক তালুকদার। উদ্ধার হওয়ার পর এইমসে (AIIMS) শারীরিক পরীক্ষা শেষে শুক্রবার দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন তিনি। কঠিন এক সংগ্রাম পেরিয়ে আসা মানিককে সংবর্ধনা দেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় ও বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ গ্রামের মানুষজন।
এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মানিকবাবু বলেন, ” ওই জায়গায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তবে আমরা ভয় পাইনি। ১৭ দিনের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে, আমরা প্রথমে ১৮ ঘন্টা অক্সিজেন পাইনি। এরপর আমরা পাম্প দিয়ে জল বের করে দিই। তখনই বুঝতে পারলো যে আমরা ঠিক আছি। তার পর আমাদের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। ১০ দিন আমাদের মুড়ি খাইয়ে কাটিয়েছি। আমাদের সকলের মনোবল ছিল। আমাদের ফেজটা ছিল ২২৩ ছিল দু কিলোমিটারের মধ্যে ছিল। যখন আমরা হাজারে ছিলাম, তখন সবাই দৌড়ে এসে বলল সুড়ঙ্গ আটকে গিয়েছে। শুরু হল আমাদের বের করার কাজ।”
মানিকবাবুর আক্ষেপ, ”বাইরে কাজ করতে যেতে হল এখানে কাজ নেই। এখানে যদি আমাদের কর্মসংস্থান দিত তাহলে বাইরে যেতে হত না। আমি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করছি যদি এখানে কাজের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভালো হয়। আর যদি কাজ না করি, তাহলে খাবো কী? আবার বাইরে যাবো কি না, এখানের পরিস্থিতি দেখে ভাবব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.