সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রথমে পুত্রসন্তান হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে বছরখানেক বয়সেই মারা যায়। তারপর পর পর দুইটি কন্যাসন্তান হয়। কিন্তু পুত্রসন্তানের আশা ছাড়েনি বাবা। ফের স্ত্রী গর্ভবতী হন। কিন্তু এবারও কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। মাস ছয়েক আগে। পছন্দ হয়নি বাবার। সেই শিশুকন্যাকে এক দম্পতির কাছে ‘বিক্রি’ করে দেন। মাস দেড়েক আগে। স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের লোদনা গ্রামের গৃহবধূ মাধবী রুইদাস (২৮) শনিবার দুপুরে শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ওইদিন গভীর রাতে সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার হাসপাতালে এসেছিলেন মৃতের মা বাসন্তী দাস। তাঁর দাবি, শ্বশুরবাড়িতে তাঁর মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। জামাই তারু ওরফে তারক রুইদাসই তা করেছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তৃতীয় কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার ফলে তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাই তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। রবিবার হাসপাতালে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শোরগোল পড়ে যায়। এদিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে মাধবীর স্বামী তারু দাবি করেন, তিনি কন্যাসন্তানকে বিক্রি করেননি। লালন-পালন করতে সমস্যা হওয়ায় সন্তানহীন এক দম্পতির কাছে তাকে দিয়েছেন। কাগজপত্র করেই তা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
[ বিবেচনায় আগেকার ভোটে অশান্তি? রাজ্যে ৭ দফায় ভোট নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ]
১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে কয়েকজন সাক্ষী রেখে তাঁর কন্যাকে গলসির নাড়ু রুইদাস ও কাজল রুইদাস নামে দম্পতিকে ওই শিশুকন্যাকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি তুলে দিয়েছেন। সেই কাগজও দেখান এদিন। টাকার কোনও লেনদেন হয়নি বলেও দাবি করেছেন তারু। তিনি বলেন, “রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করি। তিনটি সন্তানকে পালন করতে পারছিলাম না। তাই ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে পালন করতে দিয়েছি।” কিন্তু সেটাও যে বেআইনি, এইভাবে নিজের সন্তানকে কারও কাছে দেওয়া যায় না তা তিনি জানতেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ১২ আগে মাধবীর সঙ্গে তারুর বিয়ে হয়। পুত্রসন্তান মারা যায়। তার পর যে কন্যাসন্তান হয়েছে তাদের একটির বয়স ১০ বছর, অন্যটির বয়স আড়াই বছর। মাস ছয়েক আগে তৃতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। বাসন্তীদেবী বলেন, “পর পর দুই কন্যাসন্তান হওয়ায় আমরা বারণ করেছিলাম আর সন্তান না নেওয়ার জন্য। কিন্তু জামাই পুত্রসন্তানের আশা ছাড়েনি। মেয়েকে ফের গর্ভবতী করে। কন্যাসন্তান হওয়ায় তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার মেয়েটা সেই শোকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মেয়েটাকে মেরেও ফেলল।” যদিও তারু দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর মানসিক রোগ ছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাও করানো হচ্ছিল। তাঁর স্ত্রী মাঝে মাঝে আত্মহত্যার চেষ্টাও করতেন। শনিবার তিনি কাজে গিয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। বাড়ি এসে দেখেন সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
[ মায়ের বকুনিতে অভিমানে ঘরছাড়া, অবশেষে বাড়ি ফিরল কিশোরী ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.