চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: শতবর্ষ পেরোনো ঠাকুমাকে বাজনা বাজিয়ে শ্মশানে নিয়ে গেলেন নাতিরা। ঘটনা কুলটির সোদপুর গ্রামের। তাঁদের ১১১ বছরের ঠাকুমা গুরুদাসীর শেষ যাত্রাকে এভাবেই স্মরণীয় করে রাখল তাঁরা। সৌজন্যে ঠাকুমার শেষ ইচ্ছা।
সোদপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ৬ ছেলে ও নাতি নিয়ে সংসার গুরুদাসীর। বছর খানেক আগে দুই ছেলেকে খুইয়েছিলেন বৃদ্ধা। নিজের স্বর্গযাত্রা কালে রেখে গেলেন তাঁর চার ছেলে সহ সাত নাতি ও আট নাতনিকে। ৪০ বছর আগে গুরুদাসীর স্বামী লম্বুধর বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যান। সেই থেকে তাঁর ভরসা ছেলে বউমারাই। তাঁদের কাছেই থাকতেন তিনি। নাতি প্রিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঠাকুমা হাঁটতে পারতেন। ধীরে হলেও নিজের কাজ নিজেই করতেন। শয্যাশায়ী একেবারেই ছিলেন না।’ অন্য এক নাতি উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’ঠাকুমার এই মৃত্যুতে কোনও শোকের ছিল না। এরকম ভাগ্য অনেকেরই হয় না। তিনি ছেলে নাতিপুতিদের প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে গিয়েছেন।’
গত তিন দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন গুরুদাসী। পরিবারের সদস্যরা বলেন,’ঠাকুমার মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যেতেন। তখন তিনি সব ভুলে যেতেন। সুস্থ হওয়ার পর আবার স্মৃতি ফিরে আসত। তখন অনেক গল্প বলতেন।’ তাঁরা এও জানাচ্ছেন , ‘ঠাকুমার শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তাঁকে যেন বাজনা বাজাতে বাজাতে এবং শব্দ বাজি ফাটাতে ফাটাতে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।’ আজ সেই ইচ্ছাই পূরণ করার চেষ্টা করেন গুরুদাসীর পরিবার থেকে শুরু করে তাঁর পাড়া প্রতিবেশী প্রত্যেকে।
স্থানীয়রা জানান, ‘ঠাকুমা তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা একাধিকবার প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন।’ মঙ্গলবার সকালে মারা যাওয়ার পর সোদপুর গ্রামের বাসিন্দারা এবং বৃদ্ধার প্রতিবেশীরা একত্রিত হয়ে প্রয়াত বৃদ্ধা গুরুদাসীর শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে বাদ্যিকার দিয়ে বাজনা বাজিয়ে এবং শব্দবাজি ফাটিয়ে ঐ বৃদ্ধাকে শ্মশানে নিয়ে যায়। সোদপুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সব থেকে পুরাতন অভিভাবক ছিলেন ঠাকুমা। তাঁকে ব্যান্ড বাজিয়ে, বাজি ফাটিয়ে ডিসেরগড় শশ্মানে নিয়ে আসি।’ সঙ্গে ছিলেন ৩০০ জন শশ্মানযাত্রী। তাঁদের সবাইকে লুচি আলুরদম ও মিষ্টি খাওয়ানো হয় শশ্মানেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.