স্টাফ রিপোর্টার: আবাস যোজনায় আগে কেন্দ্র যে বরাদ্দ করেছিল তার হিসাব দিক রাজ্য। কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে সেই হিসেব পাওয়ার পরই পরবর্তী বরাদ্দ হবে। নবান্নকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
আবাস যোজনার আওতায় বাংলার ১১ লক্ষ ৩৬ পরিবারকে বাড়ি বানানোর খরচ হিসাবে নভেম্বর মাসে ৮২০০ কোটি টাকা অনুমোদন করে কেন্দ্র। রাজ্যের দেওয়ার কথা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। দিল্লি বলে দিয়েছিল, ৩১ মার্চের মধ্যে ওই টাকা উপভোক্তাদের দিয়ে দিতে হবে। সেই মোতাবেক এগোয় রাজ্য। কিন্তু এরই মধ্যে বিজেপির সাংসদরা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি দেন। তাঁদের অভিযোগ, এর আগের আবাসের টাকার হিসাব চাওয়া হোক।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক তারপরই ৪৯৩ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠিয়েছে নবান্নকে। তাতে বলা হয়েছে, এর আগে আবাস যোজনায় খরচের হিসাব নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল তার সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। তার উত্তর আগে দেওয়া হোক, তবেই পরবর্তী বরাদ্দ হবে। একই ভাবে ১০০ দিনের কাজ আর গ্রাম সড়ক যোজনায় খরচের হিসাব নিয়ে উত্তর চেয়েছে দিল্লি। যার অর্থ হল, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকাও কবে আসবে তার ঠিক নেই। এর মধ্যেই ৯ জেলায় আবাসের কাজ দেখতে টিম পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। এদিকে শুক্রবার কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত রাষ্ট্রমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পাটিল কৃষ্ণনগরে এসে দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর কথা বলে জানিয়ে দেন, তাদের সমীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর টাকা পাঠাবে না দিল্লি। যা নিয়ে ফের প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, “বিজেপি বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিচ্ছে। এটাই তাদের রাজনীতি। কেন্দ্র সরকার তাদের দলকে বিজেপির গণ সংগঠনের মতো পাঠাচ্ছে। তাদের নেতারা এখান থেকে চিঠি পাঠাচ্ছে। আর দিল্লি টাকা আটকে দিচ্ছে।”
আবাস নিয়ে আচমকা ডিসেম্বর মাসে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্র সরকার বলে, এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা পাঠাক রাজ্য। ৫৬ লক্ষ প্রাপকের তালিকা ফের সমীক্ষা করে ১৭ লক্ষ নাম বাদ দিয়ে তালিকা পাঠানো হয়। ৩৯ লক্ষের মধ্যে মাত্র ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার প্রাপকের জন্য টাকা পাঠিয়ে কেন্দ্র বলে, মার্চ মাসের মধ্যে তাদের বাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। এদিকে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি করতে নিজেদের অংশীদারিত্বের টাকা নিয়ে রাজ্য প্রস্তুত থাকলেও কেন্দ্রের টাকা না আসায় কাজই শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে টাকা চেয়ে ফের চিঠি দিচ্ছে রাজ্য। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সবার মাথার উপর পাকা ছাদ থাকবে। চার বছর পরও প্রতিশ্রুতি পূরণ হল না। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র তাদের প্রতিশ্রুতি মতো টাকা না ছাড়ায় মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত রাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আবাস যোজনার তালিকায় সরাসরি অনেক আবেদন তাঁরাও পেয়েছেন। সেসব যাচাই করে তবেই টাকা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, “দু’দিনের জন্য দু’টি লাইন আমরা খুলেছি। তিনটি জেলায় ঘুরে ৭-৮ হাজার আবেদন পেয়েছি। সব সমীক্ষা হবে। তার পরেই টাকা পাঠানো হবে।” এ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্রর তোপ, “সবটাই দিল্লিনির্ভর রাজনীতি। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বিরোধীদের কতটা বিড়ম্বনায় ফেলা যায়, সেই ব্যর্থ চেষ্টা তাঁরা করছেন। তৃণমূল এতে ভয় পাবে না।”
একইসঙ্গে তালিকা থেকে নাম কাটার সম্পূর্ণ দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল। বলেছেন, “১১ লক্ষের টার্গেট কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছে। ১০ লক্ষ ঘরের স্বীকৃতি রাজ্য সরকার দিয়েছে। যাঁদের নাম কাটা হয়েছে, তাঁদের বোঝানো হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাম পাঠাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা নেই। সব কাজ রাজ্য সরকারই করে।” এদিন কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণালের আরও মন্তব্য, “বিজেপি দল থেকেই তো এসব ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। কখনও দিলীপ ঘোষ, কখনও সুকান্ত মজুমদার, কখনও শুভেন্দু অধিকারীরাই বলে দিচ্ছেন, কেন্দ্রের টিম আসবে। সবরকমভাবে সরকারকে বিরক্ত করার চেষ্টা করছে। বকেয়া টাকাও সময় মতো দিচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “প্রতিহিংসাপরায়ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব করা হচ্ছে।” এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রের যে পাঁচটি দল রাজ্যে আসছে তারা ১০টি জেলায় যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.