স্টাফ রিপোর্টার: মাথায় কোনও চূড়া নেই৷ মূর্তির রং না কালো, না নীল৷ তিনি এলোকেশী৷ কোঁকড়া কোঁকড়া ঝাঁকে ঝাঁকে চুল পিঠ ছাড়িয়ে ঘনকালো আঁধার রচেছে৷ সাধক বামাখ্যাপার কল্পিত কালীমূর্তি আজও একই রকম৷ সজ্জা থেকে পুজোর আচার এক চুল এদিক ওদিক হয়নি৷ সেই ‘ন্যাড়াকালীর’ পুজোও হচ্ছে বামাখ্যাপার ভিটে আটলায়৷ কিন্তু সব আয়োজন সত্ত্বেও কোথাও যেন একটা শূন্যস্থান, মনখারাপ৷ বামাখ্যাপার দৌহিত্র তথা তৃতীয় পুরুষ পিণাকী রায় প্রয়াত হওয়ায় সাধকের বাড়ির কেউ এবছর ‘ন্যাড়াকালী’র পুজোয় সরাসরি যুক্ত থাকতে পারছেন না৷ পুজো করবেন গুরুদেবরা৷ তারাপীঠে মা তারার পুজো হবে আগের মতোই৷ সেখানে মা তারার পুজো হবে শ্যামা রূপে৷
১১ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে শ্মশানবাসী হন বামদেব৷ থাকতেন শ্মশানে৷ কিন্তু প্রতিবছর নদী পেরিয়ে এই কালীপুজোর সময়ই বাড়ি ফিরতেন সন্ন্যাসী সাধক৷ নিজের হাতে মা কালীকে পুজো করতেন৷ পুজো শেষে আবার চলে যেতেন শ্মশানে৷ বামাখ্যাপার বংশধর সিদ্ধার্থ রায় বলেন, বামাখ্যাপাকে তাঁর গুরুদেব কৈলাসপতি বাবা শ্মশানের পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনার সময় একটি কালীযন্ত্র দিয়েছিলেন৷ সেই যন্ত্র একমাত্র দীপান্বিতার পুজোর দিনই বের হয়৷ সেই মন্ত্রপূঃত যন্ত্র দেখতে প্রতিবছর ভিড় হয়৷ পুজো শেষে ফের নির্দিষ্ট স্থানে সেই সাধনার যন্ত্র গচ্ছিত রাখা হয়৷
শুধু তাই নয়, সাধক বামাখ্যাপা পুজোয় যেসব সামগ্রী ব্যবহার করতেন, তাও যত্ন সহকারে সংরক্ষিত রাখা হয় সারা বছর৷ পুজোর রাতে বের করা হয় সেই পুজোর সামগ্রী৷ ফলে তারাপীঠের পাশেই বামার ভিটে আটলায় পুজো দেখতে ভিড় জমে৷ এবারও জমবে৷ কিন্তু বামাখ্যাপার বংশধরেরা পুজো থেকে থাকবেন দূরে৷ এবার আর নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াতে পারবেন না সাধক পরিবারের কেউ৷
তবে পাশে তারাপীঠে পুজোর আয়োজন আগের মতোই৷ তারাপীঠ সেবাইত কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, তারাপীঠে পুজো হয় তান্ত্রিক মতে৷ বামাখ্যাপা তারা মাকে বড় মা বলে ডাকতেন৷ কখনও তিনি জয়তারা বলে ডাকতেন৷ এদিন তাই কোনও পুঁথি নয়, ভক্তদের ভক্তি আর আন্তরিক ডাকেই তারা মা তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ করেন৷
তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, এবার অমাবস্যা পড়ছে শনিবার৷ ফলে একদিকে যেমন মায়ের পুজোর বার, অন্যদিকে তেমনই রাত্রে অমাবস্যা৷ পরের দিন রবিবার ছুটির দিন৷ তাই অন্যান্য বছরের থেকে এবার ভিড় অনেক বাড়বে বলে তাঁদের আশা৷
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.