সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ‘পালাও বিডিও আসছে!’ শুক্রবার ভোরে বাগনান থানার এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার সম্পর্কে এরকমই সাবধান বাণী! হঠাৎ গ্রামে বিডিওর উপস্থিতিতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা৷ নদীর ধার অথবা রাস্তার পাশে ভোরে পরম শান্তিতে প্রাতঃকৃত্য সারতে বেরিয়ে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়লেন বাসিন্দারা৷ প্রকৃতির কোলে মলত্যাগের সেই ‘শান্তি’তে জল ঢেলে দিলেন বাগনান-১ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস৷
শুধু তাই নয়, মাঠে-ঘাটে শৌচকর্ম করা ব্যক্তিদের দিয়ে তিনি তাঁদের বিষ্ঠা পরিষ্কার করিয়েও ছাড়লেন৷ লোকালয়ে গ্রামের মানুষদের প্রাতঃকৃত্য বন্ধ করার জন্য বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস নিজের ও দপ্তরের কর্মীদের পুলিশ সাজিয়ে শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটের সময় হানা দেন বাগনানের কল্যাণপুর ও পানিত্রাস গ্রামে। নদীর ধারে এবং বিদ্যালয়ের পিছনের রাস্তার পাশে ভোরবেলায় প্রাতঃকৃত্য সারতে আসা এরকম ৫ জন ব্যক্তিকে হাতেনাতে পাকড়াও করলেন সত্যজিৎবাবু। গ্রামের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রেখে নাগরিক জীবনকে রোগমুক্ত করার জন্য এহেন পদ্ধতি বেশ অভিনবই বলা চলে। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ভোর চারটে চল্লিশ। তখনও ভাল ভাবে ভোরের আলো ফোটেনি। কল্যাণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের রাস্তার পাশে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে মলত্যাগ করতে দেখে এগিয়ে গেলেন পুলিশবেশী ব্লক কর্মীরা। আলো-আধাঁরির মধ্যেই ‘পুলিশ’ দেখে তড়িঘড়ি উঠে পালাতে গিয়ে খোদ বিডিওর হাতেই ধরা পড়ে গেলেন ওই ব্যক্তি। হাত জোড় করে, দু’হাতে কান ধরে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করলেন তিনি। তারপর এবারকার মতো তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত ধৃত ব্যক্তি নিজের বিষ্ঠার উপরে মাটি চাপা দিয়ে তবেই বিডিওর হাত থেকে নিষ্কৃতি পান।
[বারবার হামলার জের, নিরাপত্তা বাড়ছে দিলীপ ঘোষের]
এভাবেই পানিত্রাসে নদীর ধারে ধরা হল আরও চারজনকে। তাদের মধ্যে একজন সবে প্রাতঃকৃত্য সারতে বসেছিলেন। তাকে ধরার পর তিনি বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে তিনি মলত্যাগ করেননি। বিডিও সাহেব পুলিশ আধিকারিকের ছদ্মবেশে থাকা সুরজিৎ পাত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘ছোট বাবু, ওর পিছনে দু’ঘা রুলের বাড়ি দিন৷ তাহলেই সত্যি কথা বেরিয়ে যাবে।’’ বিডিও জানান, হঠাৎ করে এই অভিযানের পরিকল্পনা ঠিক হওয়ায় আসল পুলিশ আনা যায়নি, তাই তাঁর দপ্তরের কর্মীদের জংলা ছাপের পোশাক পরিয়ে পুলিশ সাজাতে হয়েছিল। এর পরেরবার থেকে তিনি আসল পুলিশকর্মীদের নিয়েই এলাকা পরিদর্শনে বেরোবেন। সে ক্ষেত্রে ধৃত ব্যক্তিকে থানাতেও তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে তিনি জানান। তবে বিডিওর এই অভিযান মাঠে ঘাটে প্রাতঃকৃত্য সারতে আসা গ্রামের মানুষদের কাছে যে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য। সকলেই নিজের ভুল কবুল করে এক বাক্যে অঙ্গীকার করেছেন যে তাঁরা শৌচালয় ছাড়া আর কখনও যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.