সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: পরিবেশ রক্ষা আর স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা নিয়ে পদব্রজেই ভারত ভ্রমণে (India Tour) বেরলেন বাংলার তিনজন। লক্ষ্য একটাই। হেঁটে এবং মাঝেমধ্যে সাইকেল চালিয়ে দেশের ২৮ রাজ্য পরিভ্রমণ করা। তাতে যেমন গাড়িঘোড়ার দূষণ থেকে পরিবেশ বাঁচবে, তেমনই হাঁটাহাঁটি ও সাইকেল চালানোর জন্য শরীর সুস্থও থাকবে। আর এই জোড়া উদ্দেশ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার নদিয়ার (Nadia) দুই ও পূর্ব বর্ধমানের একজন রওনা দিলেন। নদিয়ার দুই যুবক কৃষ্ণগোপাল সরকার ও মাহিতোষ ঘোষকে ‘গাইড’ করবেন পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) অগ্রদ্বীপের বাসিন্দা সুভাষ সরকার।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে দৈনন্দিন জীবনে পরিশ্রম লাঘব হয়েছে অনেকটাই। একদিকে যেমন সুফল অন্যদিকে ঠিক তেমনি কুফলও প্রতিনিয়ত টের পাওয়া যাচ্ছে। দৈহিক বা শারীরিক পরিশ্রম (Physical Activity) না করায় শরীরে বাসা বাঁধে হাজারও রোগ। চিকিৎসকরা অনেকেই এসব থেকে মুক্তি পেতে শারীরিক কসরতের পরামর্শই দিচ্ছেন। হাঁটা, দৌড়নো বাড়ানো দরকার। এসবই নীরোগ থাকার সহজ পথ। আর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এমনটাই মনে করেন একসময়ে বিছানায় শয্যাশায়ী, পরে সবুজ মাঠে হাঁটা (Walk) ও দৌড়নোর (Run) ফলে সুস্থ হয়ে ওঠা তিনজনের। তাঁরাই আজ হেঁটে ভারত ঘুরতে বেরিয়েছেন।
এই তিনজনের মধ্যে দু’জন নদিয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল সরকার ও মাহিতোষ ঘোষ। অন্যজন সুভাষ সরকার পূর্ব বর্ধমান অগ্রদ্বীপের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে বাকি দুজনের ঘনিষ্ঠতা মাঠকেন্দ্রিক। এর আগেও দিঘা, দার্জিলিং, কেদারনাথ-সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে গিয়েছেন হেঁটে এবং সাইকেলে। এবারে আনুমানিক ছ মাস সময় হাতে নিয়ে পরিভ্রমণ করছেন তাঁরা। তাঁদের বার্তা, পরিবেশ তো বটেই, তবে চিকিৎসা বিহীন সুস্থ থাকার উপায় একমাত্র মাঠে ছোটা আর রাস্তায় হাঁটা। নিজেরাই তার নিদর্শন দেখাচ্ছেন।
ফুলিয়া শিক্ষা নিকেতনের মাঠে প্র্যাকটিস করে কৃষ্ণগোপাল এবং মাহিতোষ ঘোষ। কৃষ্ণগোপাল বর্তমানে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছে। মাহিতোষের অবশ্য পড়াশোনা শেষ হয়েছে। পাশের জেলা পূর্ব বর্ধমানের সুভাষ সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতায় গিয়ে। সুভাষবাবু জানান, তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত (Paralysed) রোগী ছিলেন। চিকিৎসক একদিকে অস্ত্রোপচার, অন্যদিকে প্রচুর হাঁটা এবং দৌড়ানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আজ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু তাইই নয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক দৌড় প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে ব্রোঞ্জ পদক এনেছেন।
কৃষ্ণগোপাল জানালেন, ভারত ভ্রমণের সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল দীর্ঘদিন ধরে। দেশের ২৮টি রাজ্য হেঁটে এবং দৌড়ে ঘুরে দেখা আরও সৌভাগ্যের। তবে তাঁদের এই তিনজনের দলে একটি মাত্র সাইকেল(Cycle)। কখনও কেউ বিশ্রাম নিলে অন্য কেউ চালাবেন সাইকেল। আনুমানিক ৬ মাস ধরে দৌড়ে এবং সাইকেল চালিয়েই তাঁরা গোটা দেশ ঘুরবেন। তবে সাইকেলের আরেকটি প্রয়োজনীয়তা আছে। দীর্ঘ ছ মাসের পোশাক, খাবারদাবার, রান্নার সরঞ্জাম, রাতে শোয়ার ব্যবস্থা-সহ কিছু মালপত্র বহনের জন্যেও সাইকেলটি সঙ্গে নেওয়া।
তিনজনের এই দলের মূল উদ্যোক্তা মাহিতোষ ঘোষ বলেন, ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের এই মাঠই তাঁর প্রাণদাতা। একসময়ের জটিল অসুখ আজ পায়ের তলায়, এই মাঠে বন্ধুত্ব হওয়া সমবয়সী বা বেশি বয়সের অনেকেই তাঁকে নানান সহযোগিতা করে। এর আগেও, তাঁদের সহযোগিতাতেই রাজ্য ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে। এবারে সকলের আশীর্বাদ, ভালবাসাই পূর্ণ হতে চলেছে ভারত ভ্রমণের মনোবাসনা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.