দীপঙ্কর মণ্ডল ও সৌরভ মাজি: ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর খবরের জের। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের ইংরেজি পাঠ্যপুস্তকে বর্ণবিদ্বেষী পাঠ দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড হলেন দুই শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে একথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এই বইটি সরকারি ছাপাখানায় ছাপা হয়নি। সরকার অনুমোদিত বইও নয়। নিজেদের উদ্যোগে স্কুলে এটা পড়ানো হচ্ছিল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ”আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বাইরের কোনও বই এভাবে পড়ানো যাবে না। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শ্রাবণী মল্লিক ও বর্ণালি দাসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” শ্রাবণীদেবী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। বর্ণালীদেবী সহ-শিক্ষিকা। স্কুলটিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়।
প্রাক-প্রাথমিকে ইংরেজি বইয়ে U অক্ষরের পরিচিতি ঘটাতে ‘UGLY’ শব্দ লিখে তার অর্থ ‘কুৎসিত’ লেখা হয়েছে। সঙ্গে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ছবি দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে বর্ধমান শহরের রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা তথা কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের সান্ধ্য বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ মজুমদার আপত্তির কথা জানান পূর্ব বর্ধমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপনকুমার দত্তকে। সুদীপবাবুর কথায়, ”স্কুলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নয়, পাঠ্যপুস্তকের লেখিকা ও তার প্রকাশক যেভাবে ওই ছবি ব্যবহার করেছেন, তাতে শিশুদের বর্ণবিদ্বেষমূলক মনোভাব হবে। যা খুবই দুঃখজনক।” বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমেও। যদিও স্কুলের সাসপেন্ড হওয়া দুই শিক্ষিকার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকে সরকারি অনুমোদনহীন একটি ইংরেজি বই পড়ানো হচ্ছিল। সেই বইতে ‘ইউ’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত করতে ‘আগলি’ শব্দের ব্যবহার হয়েছে। বাংলায় ‘কুৎসিত’ শব্দের মানে বোঝাতে এক কৃষ্ণাঙ্গের ছবি দেওয়া আছে বইটিতে। যা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দুনিয়া। এরমধ্যে বর্ধমানের সরকার পোষিত স্কুলে এমন বর্ণ বিদ্বেষ মূলক বিষয় থাকা বই পড়ানো হচ্ছিল। ইংরেজি অ্যালফাবেট ‘U ফর UGLY’-র উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ছবি। এর মানে শিশুদের শেখানো হচ্ছে কালো বা কৃষ্ণাঙ্গ মাত্রেই সে কদাকার এবং কুৎসিত। এই ঘটনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন অবিভাবকরা। এদিন পার্থবাবু ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। শাস্তিপ্রাপ্ত দুই শিক্ষিকা-সহ ওই স্কুলের সবাই এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, এই ঘৃণ্য বিষয়টি যে ওই বইতে ছিল তা তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.