পলাশ পাত্র, তেহট্ট: কারও জন্ম কৃষকের পরিবারে, তো কারও বাবা রাজমিস্ত্রি৷ সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা৷ অভাব নিত্যসঙ্গী৷ আর্থিক বাধায় মেলেনি বইপত্র৷ গৃহশিক্ষকও ছিল না৷ স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যে সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করেছে নদিয়ায় তেহট্টের সুমন হালদার এবং মৌসুমী হালদার৷ তারাই এখন চোখের মণি পরিজন এবং প্রতিবেশীদের৷
হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠ থেকে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিল তেহট্টর চাঁদেরঘাটের ধোপট্টয়ের বাসিন্দা সুমন হালদার৷ বাবা কৃষক৷ অভাব নিত্যসঙ্গী৷ সেই পরিবারের সন্তান সুমন পেয়েছে ৪৬৯ নম্বর৷ প্রতিদিন নিয়ম করে সাত ঘন্টা করে পড়াশোনা করেছে সুমন৷ পড়াশোনা যদি হয় সুমনের প্রথম পছন্দ, তাহলে দ্বিতীয়টা অবশ্যই ক্রিকেট খেলা৷ গল্পের বই পড়তেও ভালবাসে সে৷ তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সুমন বলে, ‘‘বই খুঁটিয়ে পড়েছি। রেফারেন্স বইও পড়েছি। স্যারদের নোটসও ভাল করে পড়েছি৷ ফেসবুক করার থেকে খেলাধুলো, গল্পের বই পড়া অনেক ভাল।’’ ভূগোল অনার্স নিয়ে পড়ে আগামী দিনে ডব্লুবিসিএস অফিসার হতে চায় সুমন। ছাত্রের মা মায়া হালদার বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে সুমনের ভাল ফলাফলে আমরা খুশি।’’ সুমনের স্কুলের শিক্ষক বলেন,‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল৷ ও আমাদের স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। আমরা খুব খুশি৷’’
তেহট্টের মৌসুমী হালদারও উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭৮ নম্বর পেয়েছে৷ তার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা স্কুলে মিড ডে মিলের রাঁধুনি৷ নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে মৌসুমীর এই ফল তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মৌসুমী ভবিষ্যতে গবেষক হতে চায়৷ ছোট থেকেই মেধাবি মৌসুমী স্কুলে প্রথম স্থান পেয়েছে। মাধ্যমিকে ৬৫১ নম্বর পেয়েছিল সে৷ পড়াশোনার চাপের ফাঁকে গান শুনতে ভালবাসে মৌসুমী৷ ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘সংসারে অভাব থাকায় স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না করি। ও বড় হোক এটাই চাই।’’ তেহট্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাণিক ঘোষ বলেন, ‘‘ও খুব ভাল মেয়ে। ও যেভাবে এগিয়েছে তাতে আমরা গর্বিত।’’ ভাল ফল করতে পেরে খুশি দুই পড়ুয়াও৷ বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে বাধা এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য তাদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.