দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: “আমাদের সবাইকে একসঙ্গে বাঁচতে হবে, তাই কমবেশি খেয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে।” মুখে এই কথা এবং মনের জোরে পরিচারিকার কাজ করেও দুস্থদের পাশে দাঁড়ালেন হতদরিদ্র দুই বোন। শুধু অর্থ নয়, কাউকে সাহায্য করার মানসিকতাও যে একজন মানুষের থাকা প্রয়োজন তাই হাসি মুখে প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা। এই মহান উদ্যোগের জন্য দুই বোনকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার প্রায় সকলেই।
টুম্পা দাস ও মীরা মাল সম্পর্কে দুই বোন। টুম্পার স্বামী পেশায় ভ্যানচালক ও মীরার স্বামী পেশায় জোগাড়ে। দুই বোন একাধিক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। লকডাউনের জেরে স্বামীদের কাজ নেই। ভরসা স্ত্রীরাই। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে অনেকেই কাজে আসতে বারণ করে দিয়েছেন। কয়েকটি বাড়িতে শুধু কাজ বজায় রয়েছে। আর নিজেদের পাড়ায় অন্যদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাঁদের অনেকেরই কোনও কাজ নেই। এই পরিস্থিতিতে দুই বোন শুধু নিজেদের সংসারেরই হাল ধরেননি পাড়ার অসহায় আরও জনা কুড়ি পরিবারের হাল ধরেছেন। নিজেদের সংসার সামলে তাঁরা এলাকার দরিদ্র মানুষের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
টুম্পা ও মীরা বলেন, “আমাদের অবস্থাও খারাপ। কিন্তু আমরা রাজ্য সরকারের দেওয়া রেশন সামগ্রী পাই। তারপর কয়েকটি বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার পথে কিছু ক্লাব সংগঠন আমাদের প্যাকেটে করে চাল, ডাল, আলু দিচ্ছে। আবার অনেক বাড়ি থেকে কিছু খাবার দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের পাড়াতেই এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা কিছুই পাচ্ছেন না। তাই আমাদের সংসারে নিজেদের প্রয়োজনের যতটুকু দরকার সেটুকু রেখে বাকিটা ওই মানুষগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশীরা সকলে মিলে একসঙ্গে বাঁচতে। তাই লড়াইটা আমাদের সকলের। আমাদের বিশ্বাস মানুষকে দিলে আমাদের এই হাঁড়ি আর যাই হোক খালি হবে না।”
তাই রোজ একাধিক বাড়ি থেকে পাওয়া খাবার, ক্লাব থেকে পাওয়া খাদ্যসামগ্রী ব্যাগে ভরে রোজই দুই বোন বেরিয়ে পড়ছেন এলাকার অভুক্ত মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে। মীরা এবং টুম্পার প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রায় সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.