বিক্রম রায় ও শান্তনু কর: পেটের টানে স্ত্রী ও সন্তানদের থেকে দূরে গিয়ে ভিনরাজ্যে কাজ করতেন সুভাষ রায়। ছ’মাস পর ছুটি নিয়ে ফিরছিলেন বাড়ি। মনের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ফুটছিলেন তিনি। তিন মাসের মেয়েকে প্রথমবার চোখের দেখা দেখবেন, এই আনন্দে ভরে ছিল তাঁর মনপ্রাণ। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনোর ঠিক আগেই সব শেষ। ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ২৬ বছরের সুভাষের প্রাণ। কোচবিহারের রায় পরিবারে এখন শুধুই বিষণ্ণতা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ ময়নাগুড়ির দোমোহানি এলাকায় লাইনচ্যুত হয় গুয়াহাটিগামী আপ বিকানের এক্সপ্রেস (Maynaguri Train Accident)। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ট্রেনটির বেশ কয়েকটি কামরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১২টি বগি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কোচবিহারের দুই যাত্রীও। একজন ২৩ বছরের চিরঞ্জিৎ বর্মন এবং অন্যজন সুভাষ রায়। দু’জনই কোচবিহারের (Coochbehar) বাসিন্দা। কোতওয়ালি জেলার দেওয়াবোশে সংসার সুভাষের। স্ত্রী ও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। তিন মাস আগেই জন্মেছে মেয়ে। কাজের সূত্রে জয়পুরে থাকতেন সুভাষ। কেবল ওয়্যারের কারখানার কর্মী ছিলেন। তাই মেয়ের জন্মের সময় সামনে থাকতে পারেননি। তাঁর চোখের আড়ালেই বেড়ে উঠেছে তিন মাসের সন্তান। অবশেষে তাকে দেখার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু নিয়তির লিখন এড়ানো গেল কই।
“সুভাষের সঙ্গে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদই ফোনে কথা হয়েছিল। বলল, কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। তারপরই টিভিতে দেখলাম ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আর ফোন করে ছেলেকে পেলাম না।” চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললেন সুভাষের মা। শোকে পাথর স্ত্রী। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। ছ’মাস আগে কাজে যোগ দেওয়া স্বামীকে যে আর কখনও দেখতে পাবেন না, বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁর। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের এক্সপ্রেসের এস ১০ কামরার বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয় সুভাষের দেহ। তাঁকে শনাক্ত করার জন্য তাঁর স্ত্রীকে জলপাইগুড়ির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে, দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে শুক্রবার সকালে জলপাইগুড়ি পৌঁছে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এসে চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। কেমন করে এই দুর্ঘটনা ঘটল আহতদের কাছ থেকে তার খোঁজ নেন তিনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার, হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তাও জানতে চান। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিশ্রমের প্রশংসা করেন তিনি। পাশাপাশি রেলমন্ত্রী জানান, দুর্ঘটনার কারণ শীঘ্রই সামনে আসবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.