সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লাখ টাকার বাজি৷ না, কোনও খেলার মাঠ বা ফাটকা বাজারে নয়৷ এই লাখ টাকার বাজি হল তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকের মধ্যে৷ চলতি লোকসভা ভোটে যে দলের প্রার্থী জিতবে, উলটো পক্ষের সমর্থকের থেকে তাঁর প্রাপ্তি হবে গুনে গুনে এক লাখ টাকা৷ হ্যাঁ, এমনই বাজি ধরেছেন পুরুলিয়ার ২নং ব্লকের ঘোঙা গ্রামের দুই বাসিন্দা মানিক মাহাতো, মন্তা মাহাতো৷ রীতিমতো নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি হয়েছে দু’জনের মধ্যে৷
চুক্তিপত্রে লেখা, ‘অদ্য পঞ্চ ভদ্রায়ন থাকিয়া ১৪.৫.১৯ তারিখে মানিক এবং মন্তা চুক্তি হইল, মৃগাঙ্ক মাহাতো জিতলে মন্তা মাহাতোকে মাণিক মাহাতো এক লক্ষ টাকা দিবে এবং জ্যোতির্ময় মাহাতো জিতলে মানিক মাহাতোকে মন্তা মাহাতো এক লক্ষ টাকা দিবে।’ একেবারে দশ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে জিতবে কে, তা নিয়ে লক্ষ টাকা বাজি ধরেছেন অমৃত ওরফে মন্তা মাহাতো এবং মানিক মাহাতো। শুধু তাই নয়, ওই চুক্তি পত্রে তাঁদের ছবি-সহ সই আছে৷ কার পক্ষে বাজি ধরেছেন,সেসবও উল্লেখ করা হয়েছে৷ চুক্তিপত্রে সাক্ষী হিসাবে সই রয়েছে চব্বিশ জনের। আর চুক্তির কাগজই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
পুরুলিয়ার মত প্রান্তিক জেলায় ভোটে জয়-পরাজয় নিয়ে এভাবে বাজি অতীতে দেখা যায়নি। ভোটের উত্তাপ যে এভাবে বেটিং-এর স্তরে চলে আসবে, তা দেখে সকলেই তাজ্জব বনে গিয়েছেন৷ অবাক জেলার রাজনৈতিক মহলও। আসলে রাজ্যের ৪২টির মধ্যে এই কেন্দ্র এবার একেবারে ‘হট সিট’। এই আসনে জয় যেমন বিজেপির কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনই আসনটি ধরে রাখা শাসক দলের প্রেস্টিজ ইস্যু।
এদিকে, প্রার্থীদের জয় নিয়ে এই চুক্তিপত্রের লাখ টাকা বাজির ছবি সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। একেই এভাবে বাজি ধরা বেআইনি। তার উপর আবার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে এমন চুক্তি দেখে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে পুলিশের। ওই চুক্তিপত্রে থাকা ২৪ জনের খোঁজে এখন তল্লাশি শুরু করেছে৷ ওই স্ট্যাম্প পেপারের মাথায় লেখা আছে, ‘গ্রাম–ঘোঙা’। যে অমৃত মাহাতো ওরফে মন্তার সঙ্গে মানিক মাহাতোর চুক্তি হয়েছে, সেই অমৃতের নামের পাশে স্ট্যাম্প পেপারে লেখা রয়েছে – তৃণমূল৷ আর মানিক মাহাতোর পাশে লেখা – বিজেপি। এই স্ট্যাম্প পেপারের দ্বিতীয় পাতায় দেখা যাচ্ছে, গত ২৬ এপ্রিল এই পেপার কিনেছেন নিজেকে বিজেপি বলে পরিচয় দেওয়া ঘোঙার মানিক মাহাতো। ওই পাতাতেই সাক্ষী হিসাবে রয়েছে চব্বিশ জনের সই। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভোটের ফলাফল নিয়ে এভাবে বাজি ধরা একেবারেই নজিরবিহীন পুরুলিয়ায়৷ এই কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী মৃগাঙ্কমাহাতো বলেন, ‘ভোটে কেউ জিতবেন, কেউ হারবেন। লড়াইয়ে তো হার–জিত রয়েইছে। কিন্তু এভাবে বাজি ঠিক নয়।’ প্রায় একই কথা পুরুলিয়া জেলা বিজেপিরও। তবে তাঁরা বলছেন, পুরুলিয়া আসন নিয়ে বেটিং বাজারেও বিজেপিই এগিয়ে। আর বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলেন, ‘এই সাট্টা-বাজির সংস্কৃতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। তবে এটা ঠিক, ভোটের বাজারে এই কেন্দ্রে বিজেপির যেমন প্রবল হাওয়া ছিল, তেমনই সাট্টার বাজারেও এগিয়ে গেরুয়া শিবিরই।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.