আকাশনীল ভট্টাচার্য, বারাকপুর: ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া। সন্দেশখালির উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার আগেই দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমায় প্রাণ হারালেন এক তৃণমূলকর্মী-সহ দুই বৃদ্ধ। জখম হয়েছেন আরও চারজন। সোমবার রাত সাড়ে দশটা ঘটনাটি ঘটেছে জগদ্দল থানার ভাটপাড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারুইপাড়ার ২২ নম্বর গলিতে। মৃতদের নাম মহম্মদ হালিম (৬২) এবং মহম্মদ মুখতার (৬৮)। বোমার ঘায়ে জখম হয়েছে রুবি পারভিন (৪২), মহম্মদ পারভেজ আলম (২২), মহম্মদ তাবরেজ আলম (১১) ও প্রিন্স নামে চারজন। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বারুইপাড়ার ২২ নম্বর গলিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় ব়্যাফ-সহ প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ হালিম ও মহম্মদ মুখতার জগদ্দলের অ্যাংলো ইন্ডিয়া জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রাতের খাওয়া সেরে বাড়ির সামনে বসে গল্পগুজব করছিলেন ওই দুই বৃদ্ধ। অভিযোগ, সেসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের দুষ্কৃতীরা অতর্কিতে হানা দিয়ে বোমাবাজি চালিয়ে চম্পট দেয়। মাথায় বোমার আঘাত লাগায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মহম্মদ হালিমের। অপরদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুক্তারকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে জগদ্দল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লালবাবু দাস (৬২), তাঁর ছেলে ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৪) এবং প্রদীপ কুমার সাউ (৫১) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের তরফে দায়ের করা এফআইআর-এ এই তিনজনের নাম রয়েছে। ধৃতরা বারুইপাড়া ২২ নম্বর গলির বাসিন্দা। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যামের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ওই এলাকায় বোমাবাজি করেছে। বোমাবাজির ঘটনায় মৃত মহম্মদ হালিম একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী ছিলেন। আরেক মৃত ব্যক্তি মহম্মদ মুখতারও তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। বিজেপি মদতে এলাকার তথাকথিত মস্তানরা প্রকাশ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হলেও প্রশাসন নির্বিকার।
যদিও তৃণমূলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বারাকপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। সেই কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ দাগী অপরাধীদের পাকড়াও করছে না। ছোটবাবু নামে একজন দাগী অপরাধীকে ধরার পড়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। জেল থেকেও দাগী অপরাধীদের ছাড়িয়ে আনা হচ্ছে। গত ১৯ মে ভাটপাড়া কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে ভাটপাড়ায় তাণ্ডব চালিয়ে ছিলেন। তারপর থেকেই ভাটপাড়া অশান্ত। কিন্তু পুলিশ দাগী অপরাধীদের ধরছে না।
বিজেপি সাংসদের বক্তব্য, দুটো বোমা নিশ্চয়ই ২৫ জন মিলে ছুঁড়তে পারে না। কিন্তু, ২৫ জনের নামে এফআইআর করা হল। মৃতদের এলাকার নিরীহ তিন প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করা হল। বোমাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত প্ৰকৃত সমাজবিরোধীদের তদন্ত করে ধরা উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.