নন্দন দত্ত , সিউড়ি: একা হয়ে যাওয়া দু’টি প্রাণ সঙ্গী পেল। জীবনসঙ্গী। স্বজনহারা, অসহায় এক মেয়েকে ঘরনি হিসাবে ঘরে আনলেন এক অসহায় যুবক। করোনায় সব হারিয়ে যাওয়া শিক্ষিকাকে বিয়ে করলেন জেলা তথ্যাধিকারিক, যিনি সব হারিয়ে নিজেও নিঃস্ব হয়েছেন এ বছরেই। গোপনে, নীরবে, একান্তে একত্র হল চার হাত। এবং এতটাই অনুচ্চারে যে, বিয়ের জন্য কেউ একদিন ছুটিও নেননি। কাজের পর সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান সেরে পরদিনই নবদম্পতি ফিরলেন কর্মক্ষেত্রে।
নজিরবিহীন এ হেন নিঃশব্দ বিয়ের পাত্রপাত্রী হলেন বীরভূম জেলা তথ্য আধিকারিক অরিত্র চক্রবর্তী ও সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের রসায়নের শিক্ষিকা ঈশানী ওরফে পিউ সিনহা। দু’জনেই ছিলেন স্বজনহারা, পরিবারে একাকী। অরিত্র গত এপ্রিলে মা সর্বানীদেবীকে হারিয়েছেন, তার কিছুদিন আগে মারা গিয়েছেন বাবা নীলোৎপল চক্রবর্তী। সেই থেকে পোষ্য বিড়াল ছাড়া অরিত্রের নিজের বলতে কেউ ছিল না।
অন্যদিকে করোনার থাবায় এক সপ্তাহের মধ্যে ভাই-বাবা-মাকে হারিয়ে ঈশানী পড়েছিলেন অকূল পাথারে। গত ১৬ মে মা দীপ্তিদেবী মারা যান, চারদিন বাদে চলে যান বাবা রামদাস সিনহা। এখানেই শেষ নয়, পর দিন আট বছরের ছোটভাই রাজদীপের জীবন কেড়ে নিয়ে পিউকে নিঃস্ব করে দিয়ে যায় অতিমারী। প্রাক্তন ব্যাংক ম্যানেজার রামপ্রসাদবাবুর একদা গমগমে বাড়ি যক্ষপুরী হয়ে উঠেছিল মেয়ের কাছে। রাত্রে বাড়িতে টিকতে পারতেন না, গত কয়েক মাস যাবৎ রাত কাটত জেঠতুতো দাদার আশ্রয়ে। এমনই দুঃসময়ে দু’টি একা মানুষ পরস্পরকে ঘিরে নতুন করে ভরসার নীড় বেঁধেছেন।
অরিত্র বিদ্যাসাগর কলেজে সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করার সময় থেকে দু’জনের আলাপ ছিল, একবার ঈশানীর পরিবার থেকে অরিত্রের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও যায়। কিন্তু তথ্য দপ্তরের আধিকারিকের ধনুর্ভাঙা পণ ছিল, বিয়ে করবেন না। তাই তখন চার হাত এক হয়নি। একাকীত্বের যন্ত্রণা এবার তাঁদের মিলিয়ে দিয়েছে। তবে নির্মম বাস্তবকে ওঁরা এতটাই কাছ থেকে দেখেছেন যে, আনন্দে গা ভাসাতে পারেননি। বিয়ের পরের দিন সকালে যথারীতি জেলা তথ্য দপ্তরের চেয়্যারে গিয়ে বসেছেন অরিত্র চক্রবর্তী। ঈশানীও যথারীতি কলেজে গিয়ে কেমিস্ট্রির ক্লাস নিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.