সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রকৃতি আচমকা কেড়ে নিল দুটি তরতাজা প্রাণ। প্রকৃতির রুদ্র রূপের সামনে অসহায় নীরব দর্শকে পরিণত হলেন বাকিরা। বাজ পড়ে প্রাণ হারালেন দুই ফুটবলার। মর্মান্তিক ঘটনায় স্তব্ধ পুরুলিয়া।
তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর একটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হত গ্রামীণ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ভিড়ও হয়েছিল বেশ। হঠাৎ তাল কাটল। মেঘ কালো করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে পাহাড়ের মাঠ জুড়ে। যদি পাহাড়ের অন্য প্রান্তে বর্ষার মেঘের সঙ্গেই রোদ্দুর চোখে পড়ছিল। কিন্তু এ প্রান্তে মুষলধারে বৃষ্টিতে মাঠে ভিড় করা দর্শকরা এদিক-সেদিক গিয়ে আশ্রয় নেন। খেলোয়াড় ও আয়োজকরা প্রায় সকলেই মাঠের একপাশে গাছের তলায় সামিয়ানা খাটানো মঞ্চের তলায় আসেন। আর তখনই ঘটে যায় অঘটন। বাজ পড়ে ঝলসে যান দুই ফুটবলার। জখম হন দর্শক-খেলোয়াড় মিলিয়ে মোট ১৪ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁদেরকে দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।
সোমবার পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় শিমুলবেড়া গ্রামের এই মর্মান্তিক ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ওই টুর্নামেন্ট। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস.সেলভামুরুগণ বলেন, “এটা কোনও বড় টুর্নামেন্ট নয়। নিয়মিতই গ্রামের যুবকরা খেলে থাকেন। বিরাট কিছু ভিড় হয়নি।” পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই ফুটবলারের নাম মেহনতো(mehonto) টুডু(২৮) ও লঙ্কেশ্বর টুডু (২০)l এঁদের বাড়ি শিমুলবেড়া গ্রামেই। মৃত মেহনতো সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি বাগমুণ্ডি থানায় কর্মরত ছিলেন। তবে এদিন অফ ডিউটিতে খেলতে আসেন। তিনি আবার আয়োজক কমিটিরও সদস্য। বাঘমুণ্ডির বিডিও উৎপল দাস মোহরীর কথায়, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। যে দু’জন মারা গিয়েছেন তাঁরা ফুটবলার। বাজ পড়ায় মোট ১৪ জন জখম হন।”
এই মর্মান্তিক ঘটনা দেখে শোকে বিহ্বল আয়োজকরাও। চোখের সামনে ঝলসে যাওয়া দুই খেলোয়াড়ের মৃত্যু দেখে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না মাঠে থাকা সকলেই। তখনও অবিরাম বৃষ্টি পড়ছিল। সেই সঙ্গে কালো মেঘে ঝিলিক দিচ্ছিল বিদ্যুৎ। তবুও ওই দুর্যোগে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আয়োজকরা জখমদের বাগমুণ্ডির পাথরডি ও আরশার সিরকাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভরতি করেন। তাঁদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানায় বাগমুণ্ডি থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.