দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: করোনা ভাইরাসের জেরে মালয়েশিয়ায় বেড়াতে গিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না হুগলির শ্রীরামপুরের দুটি পরিবার। কুয়ালালামপুরে হোটেলবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা। খাবারের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের হাতে সেরকমভাবে অর্থ নেই। ৯০ শতাংশ পর্যটকই করোনার ভয়ে যে যার দেশে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু, ওই পরিবারের সদস্যরা দেশে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সফল হয়নি। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরও মেলেনি কোনও সমাধানসূত্র।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মালয়েশিয়ায় বিমান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দু’টি পরিবারই এখন চরম অসহায় অবস্থায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা প্রতিবেদককে আবেদন জানিয়েছেন, ‘আপনারাই পারেন আমাদের এই দুর্দশার কথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে। উনি একবার আমাদের কথা জানে পারলে নিশ্চয় আমাদের ঘরে ফেরার বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে শ্রীরামপুরের ওই দু’টি পরিবার দুই নাবালককে নিয়ে বন্দিদশা কাটাচ্ছে।
ওই দলের এক সদস্য শ্রীরামপুর ইএসআই (ESI) হাসপাতাল সংলগ্ন কোয়ার্টারের বাসিন্দা সুস্মিতা রায় জানান, ছজন মিলে কলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে গত ১৪ মার্চ বিমানে করে দমদম থেকে বেঙ্গালুরু হয়ে ১৫ তারিখ রাত ২ টোয় সিঙ্গাপুর পৌঁছান। ১৫ ও ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখার পর ১৭ মার্চ সকাল ৯ টায় বাসে করে তারা মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিকেল পাঁচটায় কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। সুস্মিতা আরও জানান, তিনি এক পর্যটকের কাছে শুনেছিলেন কুয়ালামপুরে সব হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একথা ট্রাভেল এজেন্টকে জানানোর পরও সে কোনও কথার গুরুত্ব না দিয়ে মালয়েশিয়ায় তাঁদের পাঠান। কিন্তু, এখানে আসার পরই হোটেল ম্যানেজার জানিয়ে দেন তাঁরা যেন আজকের রাতটুকু কাটিয়ে কালকেই ফিরে যান। কারণ, এখানে সব হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে বুধবার সকাল থেকে তারা নানাভাবে ফ্লাইটে করে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। সন্ধেবেলায় ট্রাভেল এজেন্ট তাঁদের জানায়, এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট ভারত যাবে তাতে ওনাদের ফিরে যেতে হবে। কিন্তু, তাঁদের যখন এই খবর দেওয়া হয় তখন ফ্লাইট ছাড়তে হাতে মাত্র আধ ঘণ্টা সময় ছিল। তবু অনেক আশা নিয়ে তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে হোটেল ছেড়ে দিয়ে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু এয়ারপোর্ট পৌঁছনোর আগেই এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। এরপর গভীর রাতে এজেন্টের মাধ্যমেই তাঁরা একটি হোটেলে ফিরে আসেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়ে দেয় কোনও অবস্থাতেই হোটেলের বাইরে যাবেন না।
সুস্মিতাদেবীর কথায়, ট্রাভেলিং এজেন্ট জানিয়েছিলেন দুবাই হয়ে ভারতে ফেরার একটা ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু, দুপুরের দিকে জানতে পারেন দুবাইয়ের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। অধিকাংশই যে যার দেশে ফিরে গিয়েছেন। সঙ্গে দু’টি বাচ্চা রয়েছে। খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। বুধবার রাতে তারা ১০টা রুটি, দুই প্লেট নিরামিষ তরকারি ও এক বাটি ভাত ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে খেয়েছেন। ফলে পকেটের টাকা শেষ হতে বসেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.