সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: আত্মীয়ের বাড়িতে পুজোর প্রসাদ খেয়ে মৃত্যু হল মা ও ছেলের। মৃত বধূর স্বামী ও তাঁর আরও এক ছেলে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এই ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর থানার ভগবতীপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।তবে পারিবারিক অশান্তির জেরে খাবারে বিষ মেশানোর সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মথুরাপুরের ভগবতীপুরের তাজপুরে রণজিত কয়ালের বাড়িতে লক্ষীপুজো ছিল। পুজোয় নিমন্ত্রিত ছিলেন রণজিতবাবুর দাদা বিশ্বনাথ কয়াল ও ও তাঁর পরিবার। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে এসেছিলেন বিশ্বনাথবাবু। পুজো শেষে ঠোঙায় রাখা ছিল পুজোর প্রসাদ ও মাখা সন্দেশ। ওই ঠোঙা থেকেই পরিবারের সদস্যদের প্রসাদ খেতে দেওয়া হয়। দুপুরের খাওয়া-দাওয়াও একসঙ্গে সারেন সকলে। বিকেলের পর থেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেন বিশ্বনাথবাবু, তাঁর স্ত্রী মঙ্গলা দেবী এবং দুই ছেলে নবদ্বীপ ও সোমনাথ।সঙ্গেসঙ্গে অসুস্থ চারজনকে মথুরাপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাতের দিকে তাঁদের শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়। শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে নবদ্বীপ কয়ালের (২০) মৃত্যু হয়। নবদ্বীপের মা, বাবা ও ভাইকে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় শুক্রবার ডায়মন্ডহারবার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মারা যান নবদ্বীপের মা মঙ্গলা কয়াল (৪৭)। মৃত নবদ্বীপের বাবা ও ছোটভাই সোমনাথ ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় দু’জনকেই সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রণজিত কয়াল ও বিশ্বনাথ কয়াল দুই ভাই। দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। কথাবার্তাও ছিল না দুই পরিবারের সদস্যদের। হঠাৎ কী কারণে রণজিত লক্ষ্মীপুজোর প্রসাদ খেতে দাদা বিশ্বনাথ কয়াল ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের নিমন্ত্রণ করল তা নিয়েই সন্দেহ গ্রামবাসীদের।
পরিবারের এক সদস্য অষ্টমী কয়াল জানিয়েছেন, বাড়িতে লক্ষীপুজোর পুজোর পর ঠোঙায় প্রসাদ রাখা ছিল। ওই ঠোঙা থেকেই প্রসাদ খেয়েছিলেন তাঁরা। তারপর দুপুরে ভাতও খান সকলে। বিকেলের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করতে শুরু করেন । পেটখারাপও শুরু হয় তাঁদের। ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল ও হাসপাতালের ভাইস-প্রিন্সিপাল ডা: রমাপ্রসাদ রায় জানিয়েছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। মৃত ও অসুস্থদের শরীরে বিষের মাত্রা ও তীব্রতা বেশি, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। প্রাথমিকভাবে পুলিশেরও অনুমান, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে পুজোর প্রসাদ নাকি দুপুরের খাবার থেকে বিষক্রিয়া তৈরি হয়েছিল, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। এই ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। পুলিশ রণজিত ও তাঁর স্ত্রী তনয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.