ছবি: প্রতীকী
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাকপুর: পারিবারিক বিবাদের জেরে দাদাকে খুন করে মাটির তলায় দেহ লোপাট করেছিল দু’ভাই। এরপর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল তারা। বিবেকের দংশনে ছ’বছর পর ফিরে এসে সেই অপরাধ কবুল করে থানায় আত্মসমর্পণ করে দুজন। তাদের বয়ান অনুযায়ী, বাড়িতে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় মৃত দাদার কঙ্কাল (Skeleton)। শনিবার সকালে ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের আদর্শপল্লি এলাকায়।
কাউগাছি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্যামনগর আদর্শপল্লি এলাকার মানুষজন জানতেন, ৬ বছর আগে মাঝেমধ্যেই শীল পরিবারের ভাইদের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে বিবাদ চলত। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বড় ভাই নিপু শীল ও মেজ ভাই অপু শীলের মধ্যে মারামারিও হয়। হাতাহাতিতে দুই ভাইয়ের মাথা ফেটে যায়। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা গিয়ে দুই ভাইকে ছাড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসার পর তাঁরাই দায়িত্ব নিয়ে ফের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যান। কিন্তু পরের দিন সকালেই দেখা যায়, বাড়িতে তালা। কেউ নেই। কোথায় গিয়েছেন সকলে, সে সম্পর্কে কেউ কোনও আঁচই করতে পারেননি।
এরপর কেটে গিয়েছে ৬ বছর। শীল পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে কেউ এলাকায় আসেনি। তবে মাস কয়েক আগে আদর্শপল্লিতে দেখা যায় মেজ ভাই অপু শীলকে। তাঁকে দেখে সকলে জানতে চান, দাদা ও ভাই কোথায়। সে জানায়, বড় দাদা এবং ছোট ভাই ভিন রাজ্যে রয়েছে। অপু শীল জানায়, সে নিজেদের তালাবন্ধ বাড়ি খুলে সেখানে থাকবে। এলাকাবাসী তখন তাকে বলেন যে তিন ভাই না এলে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এরপরই দিন পনেরো আগে ছোট ভাই তপুকে এলাকায় নিয়ে আসে অপু শীল। সেখান থেকেই সোজা জগদ্দল থানায় (Jagaddal PS) গিয়ে পুলিশের কাছে মেজো ভাই তপু শীল জানায়, তার বড় দাদা নিপু শীলকে সে খুন করেছে এবং দেহ বাড়ির বারান্দায় পুঁতে রেখেছে। আত্মসমর্পণ করতে চায় তারা।
প্রথমে অপু শীলের কথা অসংলগ্ন থাকায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। শুক্রবার ফের অপু ও তপু শীল এলাকায় এসে বাড়িতে থাকতে চায়। সেই সময় এলাকার মানুষ তাদের বড় দাদা নিপু শীলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সমস্ত ঘটনার শিকার করে অপু ও তপু শীল। এসব শুনে প্রতিবেশীরা জগদ্দল থানার পুলিশকে ফোন করে। শুক্রবার রাতে বাড়ির বারান্দা খুঁড়ে প্লাস্টিকের মধ্যে থেকে নরকঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে কঙ্কালের গায়ে থাকা জামা ও প্যান্ট দেখে এলাকার মানুষ নরকঙ্কালটি নিপু শীলের বলেই চিহ্নিত করেন। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে জগদ্দল থানার পুলিশ। অপু শীল ও তপু শীলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে শুরু হয়েছে জেরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.