দুই ভাই।
সুমন করাতি, হুগলি: নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা ছিল সংসারে। বাড়িতে বৃদ্ধা মা। দুপয়সার মুখ দেখতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে (Riyadh) পাড়ি দেন দুই ভাই। দুই বছর কাজও করেন তাঁরা। ছেলেদের পাঠানো টাকায় হাল ফিরছিল সংসারের। পরিবার যখন ভাবছিল ভাগ্য দেবতা কিছুটা মুখ তুলে দেখেছেন, তখনই আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। বিদেশে থাকার মেয়াদ শেষ হলেও কাগজপত্রের অভাবে বাড়িতে আসতে পারছেন না দুই ভাই। দিন কাটছে প্রায় অনাহারে। এখন ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে রাতের ঘুম উড়েছে পরিবারের।
হুগলির (Hooghly) গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা দুই ভাই রাজেন ও রতন সরকার। দুই বছর আগে সংসারে সুদিন ফেরানোর আশায় একটি হোটেলে রান্নার কাজ নিয়ে সৌদি আরবের (Saudi Arabia) রিয়াধে যান তাঁরা। দুই বছরের চুক্তি হয় একটি সংস্থার সঙ্গে। শুরুর দিকে সব ঠিকই ছিল। অভিযোগ, মেয়াদ ফুরিয়ে আসতেই ‘বেগড়বাই’ শুরু করে সংস্থা। কথা অনুযায়ী দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করছে না ওই সংস্থা। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাহায্য মিলছে না বলেই অভিযোগ। কোনও উপায় না দেখে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেল করে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। মেল পাঠিয়েছেন হুগলির জেলাশাসক দপ্তরেও। জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানিয়েছেন, বিষয়টি প্রশাসনের তরফে দেখা হবে।
রিয়াধ থেকে ভিডিও কলে রাজেন ও রতন জানান, ওই দেশে তাঁদের থাকার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। কিন্তু সংস্থার তরফে তা বাড়ানো হয়নি। আবার, প্রথমে আশ্বাস দিলেও তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপও করা হচ্ছে না। তাঁদের আরও অভিযোগ, সংস্থা দুমাসের বেতনও দেয়নি। রাজেন বলেন, “সংস্থা কোনও দায় নিচ্ছে না। দেড় মাস আগে ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে দরখাস্ত জমা দিয়েছি। তারাও কিছু করছে না।”
দুই ভাই জানান, তাঁদের হাতে যা টাকাপয়সা ছিল তাও শেষ। এক বন্ধুর কাছে ধার করে চলছে। সেই ধারের টাকাও শেষের পথে। রাজেনের কথায়, “রোজার মাসে সন্ধ্যায় স্থানীয় মসজিদের পাশে গিয়ে খাবার এনেছি। এখনও চেয়েচিন্তেই চলছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।” রাজেন-রতনের মা শিশুবালা সরকার আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “ছেলেরা ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরলে বাঁচি, আর কিছু চাই না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.