সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আবার ফিরে এল গুপি-বাঘা। শহর পুরুলিয়ায় ঘরে ঘরে দরজায় কড়া নেড়ে ঢোল বাজিয়ে ঝুমুর গানে করোনা সচেতনতার পাঠ দিচ্ছে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরির সেই দুই চরিত্র।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শহর পুরুলিয়ার কোরক নামে একটি নাট্য গোষ্ঠী আবার গুপি-বাঘাকে পথে নামায়। শনিবার থেকে তারা গৃহস্থের দরজায় কড়া নাড়ার পাশাপাশি মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে ঝুমুর গানে বলছে, “জ্বর সর্দি কাশি হলে/ ডাক্তারের ঠিনে যাবি চলে/ মরলো যারা ডরে লুকাই ছিল/ কোথালে ভাই করোনা জুটিল, জুটিল রে/ কোথালে ভাই করোনা জুটিল।” তবে এই গুপি-বাঘা জমায়েত চাই না। চাই না গুজব। গুপি-বাঘা জানে গুজব করোনার চেয়েও আতঙ্কের। তাই সকাল থেকে ঘরে ঘরে পা রাখছে। কখনও আবার মোড়ে দাঁড়িয়ে ঝুমুরের দু’লাইন গেয়ে আবার দরজায় ক়ড়া দিচ্ছে। বাঘার হাতে ঢোল। আর গান ধরেছে গুপি। এই গুপি-বাঘা শহর ছাড়াও করোনা নিয়ে সচেতনতার পাঠ দিতে গ্রামেও পা রাখবে।
আসলে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই পুরুলিয়াকে যে ভীষণই ভালবাসে গুপি-বাঘা। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ও যে ছিল এই দুই চরিত্র। আর সেই ‘হীরক রাজার দেশে’র ছবি শুটিং হয় পুরুলিয়ার এই মালভূমিতে। ফলে গুপি-বাঘা যেমন মানভূইঞাঁ ভাষায় কথা বলতে জানে। তেমনই জানে ঝুমুর গান। আসলে ঝুমুর যে এই এলাকার মানুষের প্রাণে রয়েছে। তাই করোনার সচেতনতার পাঠে ঝুমুর গানকেই হাতিয়ার করেছে এই গুপি-বাঘা। শহর পুরুলিয়ার চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র গুপির ভূমিকায় স্বরাজ মাহাতো করোনা নিয়ে ঝুমুর গানে যেন আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। তার সঙ্গে ঢোল বাজানো বাঘা তথা ওই স্কুলেরই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কুলদীপ সূ্ত্রধরও চোখ টানছে সকলের। আসলে আগে থেকেই গুপি-বাঘা চরিত্রে তারা বেশ মানানসই। বছর দুয়েক আগে ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ ছবির পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে শহর পুরুলিয়ার নাট্য সংস্থা কোরক ‘গুপি বাঘার গপ্পো’ নাটকে পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে রাজ্যে স্বীকৃতি পায়। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতেও তাদের পথে নামা। কোরকের কর্ণধার সুদীন অধিকারি বলেন, “হীরক রাজার দেশের হাত ধরে গুপি বাঘা অনেকদিন আগে পুরুলিয়ায় এসেছিল। তাই তারা জানে ঝুমর এখানকার মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। সেই কারণেই করোনার সচেতনতার বার্তায় তারা ঝুমুরকে হাতিয়ার করছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.