বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ক্রমশ কমছে উৎপাদন। ইতিমধ্যেই পনেরোটি চা বাগান বন্ধ হয়েছে। বিক্রির পথে আরও পঁচিশটি। একদিকে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। অন্যদিকে কম দামে নিম্নমানের নেপালি চায়ের রমরমার ধাক্কায় জগৎ বিখ্যাত দার্জিলিং চায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার শুধুমাত্র এপ্রিল মাসে দার্জিলিং চা উৎপাদনে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লক্ষ কেজি। মে মাসে ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, বাণিজ্য মন্ত্রকে বারবার সমস্যার কথা জানিয়েও ফল মিলছে না। তারই জেরে ডুবতে বসেছে দার্জিলিং চায়ের গৌরব। দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় বানিজ্য মন্ত্রকের কাছে পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ের আবহাওয়া (Weather) দ্রুত পালটাচ্ছে। কমছে বৃষ্টিপাত। গত দু’দশকে প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টি কমেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। গতবছর ২২ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮ ইঞ্চি। এবার আরও কমেছে। পরিণতিতে কাঁচা পাতার উৎপাদন ও গুণগত মান কমেছে। দার্জিলিং (Darjeeling) পাহাড়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’মাস ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ পাতা তোলা হয়। ওই পাতা থেকে অন্তত দুই মিলিয়ন কেজি চা তৈরি হয়। এটা মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ। ইন্ডিয়ান প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এটাই মরশুমের সেরা দার্জিলিং চা (Tea)। সেটা জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়। এবার বৃষ্টির অভাবে পাতা মেলেনি। ওই কারণে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে চা উৎপাদন পুরোপুরি মার খেয়েছে।
নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিত্রুকা জানান, ২০২৩ সালে ৬.০৩ মিলিয়ন কেজি দার্জিলিং চা উৎপাদন হয়েছে। এবার ৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ওই কারণে চা বাগান মালিকরা বাগান বিক্রি করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দার্জিলিং পাহাড়ের ৮৭টি বাগানের মধ্যে ১৫টি বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। ২৫টি চা বাগান মালিক খদ্দের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সতীশ মিত্রুকা বলেন, “আমি নিজেই আমার বাগান বিক্রির চেষ্টা করছি। একদিকে প্রকৃতির মার। অন্যদিকে নেপালের (Nepal) নিম্নমানের চা দার্জিলিং চা বলে চলার কারবারের মধ্যে টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
পাহাড়ের চা বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বাণিজ্য মন্ত্রকের মতো চা পর্ষদও নীরব। ওই পরিস্থিতিতে বাগান, কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। কেন নেপালের নিম্নমানের চায়ের সঙ্গে দার্জিলিং চা পাল্লা দিতে পারছে না? চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপালের চা তিনশো থেকে চারশো টাকা কেজি দামে বিক্রি চলছে। সীমান্তে ওই চায়ের গুণগত মান পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ, এখানে ওই চা কম দামে কিনে দার্জিলিং চা হিসেবে বাজারে ছাড়ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। অন্যদিকে, আসল দার্জিলিং চায়ের দাম অনেক বেশি। সেটার কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। দামের হেরফেরের জন্য একদিকে ক্রেতারা যেমন নেপালের নকল দার্জিলিং চা বেছে নিয়ে ঠকছেন। অন্যদিকে নেপালের চায়ের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় দার্জিলিং চা সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.