বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও রবিন গিরি: বিরোধ মিটছে না কিছুতেই। উল্টে তিক্ততা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে একে অন্যের ছায়া মাড়াতে চাইছে না। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (GJM) দুটি গোষ্ঠী পাহাড়ের তিনটি আসনে প্রার্থী দিতে একরকম মরিয়া। পৃথকভাবে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। শুক্রবার বিনয় তামাং (Binay Tamang) গোষ্ঠী সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে তারা একক শক্তিতে প্রার্থী দিতে পারেন, এমন সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে চলেছেন। নিচুতলার কর্মীদের দাবি তেমনই। সেটা হলে যে ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে বিজেপি সুবিধা পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের। সেটা বুঝেই সিপিআরএম শর্তসাপেক্ষে বিজেপির সঙ্গে জোটের কথা ভাবছে। গেরুয়া শিবিরের পক্ষে প্রথম থেকেই রয়েছে জিএনএলএফ। গোর্খা লিগের প্রতাপ খাতি ও লক্ষ্মণ প্রধান গোষ্ঠীও সেদিকে পা বাড়াতে তৎপর হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
কার্যত সাড়ে তিন দশক পর পাহাড়ের রাজনীতির অভিমুখ পালটাতে চলেছে। এর আগে কখনও সুবাস ঘিসিং, আবার কখনও বিমল গুরুং (Biman Gurung) ছিলেন শেষ কথা। তারা যে দলের পাশে দাঁড়াতেন, সেই দল থেকেই বিধায়ক, সাংসদ হয়েছে। এই প্রথম তেমনটা হচ্ছে না। প্রতিটি দলই তৎপর। তৃণমূল পাহাড়ের তিনটি বিধানসভা – দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং আসনে ঘাসফুল প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না। মোর্চার উপরই সেটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে পাহাড়ে তৃণমূলের মুখপাত্র এনবি খওয়াস বলেন, “আমরা বাইরে থেকে সমর্থন জানাব।” কিন্তু যদি দুই গোষ্ঠীর প্রার্থী হয় তখন কী করবেন? ওই প্রশ্নের জবাব মেলেনি খওয়াসের কাছে। যদিও এখন সেদিকেই তাকিয়ে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল। অনেকেই মনে করছেন, বিনয় তামাংদের ধারনা তাঁরা প্রার্থী না দিয়ে গুরুংকে সমর্থন করলে তাঁদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। মাঝখান থেকে বিমল ফের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়ে যাবে। বিনয়পন্থী মোর্চা নেতা অনীত থাপার দাবি বলেন, “আমরা প্রার্থী দেব।”
অন্যদিকে, ভোট কেটে ওই দুই গোষ্ঠীকেই হারাতে তৎপর জিএনএলএফ, সিপিআরএম এবং গোর্খা লিগের দুটি গোষ্ঠী। প্রত্যেকে তাকিয়ে বিজেপির রণ কৌশলের দিকে। পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, গুরুং ও বিমল বিরোধী দলগুলোকে কোন কৌশলে ব্যবহার করে ঘরে ভোট তুলে আনবে সেটাই, এখন দেখার। কারণ, সেখানে অনেক শর্ত রয়েছে। যেমন, সিপিআরএমের গোবিন্দ ছেত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে জোট চাইছেন। দার্জিলিং ও কার্শিয়াং আসন দুটি দাবি করেছেন।
এদিকে গোর্খা লিগের ভারতী তামাং গোষ্ঠী তিনটি আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে ওই দলের লক্ষ্মণ প্রধান ও প্রতাপ খাতি গোষ্ঠী ভোট ভাগাভাগি রুখতে বিজেপির পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছে। যদিও এসবকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না গুরুংপন্থী মোর্চার নেতারা। গোষ্ঠীর মুখপাত্র বিশাল রাই বলেন, “তিনটি আসনে আমাদের প্রার্থী থাকছে। পাহাড়বাসী তাঁদের ভো৩ট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এটাই শেষ কথা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.