স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি ও নিজস্ব সংবাদদাতা, মালবাজার: শুঁড়ে পেঁচিয়ে একের পর এক আছাড়৷ যতক্ষণ না ছিন্নভিন্ন হল দেহ, তাণ্ডব থামল না উন্মত্ত দাঁতালের৷ ডুয়ার্সের গরুমারা লাগোয়া পানঝোরার জঙ্গলে নৃশংস এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেও বনবস্তির বাসিন্দার প্রাণ বাঁচাতে পারলেন না ‘অসহায়’ বনকর্মীরা৷
ক’দিন ধরেই দলছুট দাঁতালের দাপাদাপিতে তপ্ত হয়ে উঠেছে লাটাগুড়ির জঙ্গল৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামার আগে জঙ্গলে জ্বালানির কাঠ কুড়োতে গিয়ে আচমকা ওই মত্ত দাঁতালের সামনে পড়ে যান চালসার মঙ্গলবাড়ি বস্তির বাসিন্দা গণবালা রায় (৪৫)৷ জঙ্গলে তখন টহল দিচ্ছিলেন বনকর্মীরা৷ মাথায় কাঠের বোঝা নিয়ে আসা ওই মহিলাকে দেখেই জঙ্গলের ভিতর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে দাঁতালটি৷ বেশ খানিকটা দূর থেকে ওই দৃশ্য নজরে আসতেই চিৎকার করে মহিলাকে সতর্ক করেন টহলরত বনকর্মীরা৷ হাতিকে তেড়ে আসতে দেখে কাঠের বোঝা ফেলে প্রাণপণে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন বনবস্তির ওই বধূ৷ কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি৷ আপ্রাণ চেষ্টা করেও ক্ষিপ্র দাঁতালটিকে রুখতে পারেননি বনকর্মীরা৷ প্রথমে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে তার পর শুঁড়ে পেঁচিয়ে একের পর এক আছাড় মারতে থাকে দাঁতালটি৷ তাতেও রোষ না-মেটায় মত্ত হাতিটি পায়ে পিষে মারে ওই মহিলাকে৷ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর৷ মাথা থেঁতলে যাওয়ার পাশাপাশি দেহ থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিটকে পড়ে হাত-পা৷ অন্তত মিনিট কুড়ি ধরে ওই তাণ্ডব চালানোর পর গর্জন করতে করতে দাঁতালটি ফের জঙ্গলে ঢুকে যায় বলে বনকর্মীরা জানিয়েছেন৷ ঘটনার নৃশংসতা দেখে আঁতাত উঠেছেন বনকর্মীরাও৷ হাতির হানায় এর আগে ডুয়ার্সের জঙ্গলে বহু মানুষের মৃত্যু হলেও এই দাঁতালটি যেভাবে ওই মহিলার উপর রোষ মিটিয়েছে, তা শিউড়ে ওঠার মতোই, বলছেন বনকর্তাদের অনেকে৷ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷
মহিলার স্বামী ধনেশ রায় পেশায় দিনমজুর৷ মালবাজারের রেঞ্জার সমীর সিকদার বলেন, যেহেতু জঙ্গলের ভিতরে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই নিয়ম অনুযায়ী মৃতের পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবে না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.