ধীমান রায়, কাটোয়া: জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসে যখন বয়স মাত্র আড়াই বছর। প্রথমে মা, তারপরেই বাবাকেও হারাতে হয়। মাত্র আড়াই বছর বয়সে নিজেদের বাড়ি থেকে একপ্রকার ‘বিতাড়িত’ হয়ে আশ্রয় নিতে হয় মামাবাড়িতে। নিজের প্রচেষ্টায় গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। টেট উত্তীর্ণও হয়েছেন। এখন টিউশন করেই নিজের ও বৃদ্ধা দিদিমার পেট চালান। এই কঠিন জীবনসংগ্রামের মাঝেই শরীরে বাঁসা বেঁধেছে টিউমার। অস্ত্রপচার করানোর সামর্থ্য নেই। নেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। অস্ত্রপচার ও চিকিৎসার জন্য সামাজিক মাধ্যমে নিজেই সহমর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার কুবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা টেট উত্তীর্ণ পূজা সরকার (২৫)।
বর্ধমানের ভাতার ব্লকের আমারুন ২ পঞ্চায়েতের কুবাজপুর গ্রামে একটি জরাজীর্ণ মাটির বাড়িতে সত্তরোর্ধ্ব দিদিমা জয়াবতী রেজের সঙ্গে থাকেন পূজা। পূজার বাড়ি ছিল মেমারী থানা এলাকায়। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাঁর বয়স যখন দুইবছর তখন তার মা রীণাদেবীর মৃত্যু হয়। তার কয়েকমাসের মধ্যেই বাবা তারক সরকার মারা যান। পূজা সরকার বলেন,” মা বাবার মৃত্যুর পর কাকা কাকিমারা আমার দায়িত্ব নিতে চাননি। তখন দাদু-দিদা আমাকে নিয়ে চলে আসেন। দাদু কয়েকবছর আগেই মারা গিয়েছেন। এখন দিদার সঙ্গেই থাকি।” পূজার মামা নেই। এক মাসি বিবাহিতা। মামাবাড়িতে জমিজমা বলে কিছুই নেই। পড়াশোনার খরচ চালানো দিদিমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। পূজা যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন তখন থেকেই টিউশন পড়ানো শুরু। সেই টাকাতেই পড়াশোনা। বর্তমানে তাঁর টিউশনের টাকায় সংসার চলে। দিদিমার চিকিৎসার খরচও পূজাকেই চালাতে হয়। নিজের চেষ্টায় ২০২২ সালে টেট পাশ করেছেন পূজা। কিন্তু চাকরি পাননি।
ইতিমধ্যে মাসতিনেক আগে হঠাৎ পেটে ও কোমরের পিছন দিকে যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসককে দেখিয়ে ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে, জরায়ুর গায়ে মস্তবড় একটি টিউমার হয়েছে। কলকাতায় এক চিকিৎসকের কাছে দেখানোর পর অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে জানায় ওই বেসরকারি নার্সিংহোম। এরপর কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয় পূজার। তারপরই তিনি সামাজিক মাধ্যমে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন-সহ যাবতীয় রিপোর্ট পোষ্ট করে লেখেন,”আমি এখন সম্পূর্ণ রূপে নিঃস্ব, অসহায়। আমি ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে পারছি না। এত টাকা পাব কোথায়? তোমরা যদি কিছু টাকা ভিক্ষা হিসাবে দিয়ে থাকো, হয়তো এই পৃথিবীতে কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারব। তাই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে তোমাদের কাছে ‘প্রাণভিক্ষা’ চাইছি।” এই কাতর আবেদন ভাতারের একাধিক ফেসবুক গ্রূপে শেয়ার হয়।
‘ভাতার পূর্ব বর্ধমান’ নামে একটি ফূসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হুম রাণা বলেন,”আমরা পূজার বাড়িতে গিয়ে ওদের পরিস্থিতি দেখে এসেছি। আমরা গ্রপ সদস্যরা ওর চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলছি। যথাসাধ্য সাহায্য করা হবে।” উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে টেট উত্তীর্ণ ভাতার বাজারের বাসিন্দা শলিল মাহান্তি বলেন,” আমরা টেট পাশ সংগঠনের তরফ থেকে পূজার জন্য চাঁদা তুলছি। ওকে বাঁচাতে চাই।” পূজা বলেন,” যারা আমার সহপাঠী,বন্ধু, অনেক পুরানো দিনের পরিচিত হিতাকাঙ্খী তারা আমাকে সাহায্য করছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.