ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: মারণ কোভিডের (Covid-19) হাত ধরে মানবদেহে নিঃশব্দে বাসা বাঁধে ক্ষয়রোগ বা যক্ষ্মা। তাই করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাধ্যতামূলক যক্ষ্মা পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্যভবন থেকে কয়েকদিন আগে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের আদেশনামা রাজ্যের সব সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে এমন ১৩২ রোগীর সন্ধান মিলেছে যাঁরা করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এরপরেই এমন কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ (এইচএফ ডব্লিউ-২৭০-৩৫/১৯/২০২০/৩৮৫) স্পষ্ট বলা হয়েছে হাসপাতাল বা বাড়িতে থেকে করোনা রোগ মুক্ত হওয়ার ৭-২১ দিনের মধ্যে যক্ষ্মা পরীক্ষা করতেই হবে। করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও শুকনো কাশি বা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হওয়া অথবা ওজন কমে গেলে অপেক্ষা না করে দ্রুত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিবি পরীক্ষা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরি দায়িত্ব নেবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলছেন, “দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম এই কর্মসূচি শুরু করল।” স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, “কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (Immunity) আগের থেকে অনেকটাই কমে যায়। ফলে দ্রুত যক্ষ্মার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
স্বাস্থ্যদপ্তরের আরেকটি তথ্য হল, রাজ্যের প্রায় দু’ হাজারের বেশি কোভিড রোগীকে পাওয়া গিয়েছে যাঁদের মধ্যে যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এইসব মানুষকে দ্রুত শনাক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, অনেক ক্ষেত্রে কোভিড -১৯ ভাইরাস যক্ষ্মাকেই ডেকে আনে। তবে সমস্যা হল, শরীরে করোনার দাপট এতটাই প্রকট প্যাথলজি পরীক্ষা ছাড়া বোঝা কঠিন। ৭-১০ দিন পরে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের শরীর থেকে সরে গেলেও যক্ষ্মা (Tuberculosis) কিন্তু রয়েই যায়। তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হল। মূলত, বস্তিবাসী, ইটভাটার শ্রমিকদের মধ্যে করোনার পর যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যাঁরা এতদিন করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন প্রয়োজনে তাঁরাও সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল থেকে নিখরচায় টিবি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ট্রু-ন্যাট বা সিভি ন্যাট পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই কফ-থুতু পরীক্ষা সম্ভব। ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত এই পরিষেবা প্রসারিত হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.