ধীমান রায়, কাটোয়া: বাবা পেশায় লরিচালক। তাঁর যা আয় আর পরিবারের সামান্য জমিজমা যেটুকু রয়েছে, তাতে সংসার চলে না। সেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানই তাক লাগানো ফল করল মাধ্যমিকে (Madhyamik Exam 2022)। আর্থিক অনটনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাধ্যমিকে ৬৮৩ পেল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা রাহুল দাস। মেধাতলিকায় দশম স্থান দখলকারীদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। অর্থাৎ মাত্র এক নম্বরের জন্য মেধাতালিকায় নাম ওঠেনি রাহুলের। পড়ুয়ার সাফল্যে খুশি পরিবার ও পরিজনরা।
পূর্ব বর্ধমানের বেলেণ্ডা গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা রাহুল দাস। দোতলা ছোট মাটির বাড়িতে দাদু, ঠাকুমা, বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকে ওই ছাত্র। রাহুলের বাবা সুভাষ দাস পেশায় লরিচালক। মা অরুনাদেবী গৃহবধূ। ভাই অভিমন্যু অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, কিন্তু তার প্রভাব পড়াশোনায় পড়তে দেয়নি রাহুল। দোতলায় একটি ছোট ঘরে মাদুর বিছিয়ে দিনভর পড়াশোনা করত সে।
দাদু পূর্ণচন্দ্র দাসের কথায়, “মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম রাহুল উঠে পড়তে বসেছে। ওকে বলতাম একটু ঘুমিয়ে নে বাবা। কিন্তু ওর পড়াশোনার নেশা ছোট থেকেই।” রাহুলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩। জানা গিয়েছে, এটাই এবছর ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর। রাহুল বাংলায় পেয়েছে ৯৭, ইংরেজিতে ৯৩, অংকে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭ এবং ভূগোলে ১০০।
রাহুলের মা অরুনাদেবী বলেন, “অভাবের মধ্যেই আমাদের চলতে হয়। তাই ছেলেকে চাহিদামতো টিউশন দিতে পারিনি। আমার ছেলে নিজের চেষ্টায় এই ফল করেছে।” ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের শিক্ষক বিপ্লব হাজরা বলেন, “রাহুল বরাবরই স্কুলে প্রথম হত। ভীষণ মেধাবী। অভাবের মধ্যেও ওর এই অধ্যাবসায় একটা দৃষ্টান্ত। আমরা গর্বিত রাহুলের জন্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.