ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: ছিল পাঁচে পাঁচ। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এখন কমে তিন। উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি লোকসভা আসন তৃণমূলের ঝুলি থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। গোদের উপর বিষফোড়া, মঙ্গলবার খোয়াতে হল জেলার চারটি পুরসভা।
এমতবস্থায় গড় বাঁচাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে মরিয়া শাসকদল। যার প্রথম লক্ষ্য, জেলাজুড়ে বেদখল হয়ে যাওয়া পার্টি অফিসগুলি পুনরুদ্ধার। একই সঙ্গে অর্জুন সিংয়ের বারাকপুরে পায়ের তলায় হারানো মাটি ফিরিয়ে আনা। ক’দিন আগেও যিনি উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জবরদস্ত নেতা ছিলেন, শিবির বদলে সেই অর্জুন এবার বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন। বস্তুত তাঁর হাত ধরেই বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শাসকদলের সমর্থন ভিত্তিতে ধস নেমেছে। স্বভাবতই এহেন অর্জুন সিংয়ের মোকাবিলা করাটাই তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম ধাপ হিসাবে অর্জুনকে মোকাবিলার জন্য তাঁর ভগ্নিপতি সুনীল সিংকে প্রধান হাতিয়ার করছে তৃণমূ্ল। বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ক্ষমতার রাশ ফেরাতে সুনীলকে কনভেনরের দায়িত্ব দিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু মঙ্গলবার মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু-সহ একগুচ্ছ কাউন্সিলর ও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সুনীল কী আদৌ তৃণমূলে থাকবেন? এবিষয়ে অবশ্য অনিশ্চিয়তা জিইয়ে রেখে সুনীল বলেন, “আপাতত দলেই আছি। ভবিষ্যতের কথা তো কেউ বলতে পারে না।”
এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনায় জেলার তিনটি আসনে জিতলেও নিজেদের দখলে থাকা দু’টি আসন বারাকপুর ও বনগাঁ হারিয়েছে তৃণমূল। শুধু তা-ই নয়, জেলাজুড়েই ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে শাসক দলের। জেলার অধিকাংশ পুর এলাকাতেই লোকসভা ভোটের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। একইভাবে হাবড়া, বিধাননগরের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা এলাকাতেও ভোটের অঙ্কে দ্বিতীয় স্থানে তারা। তার সঙ্গে বনগাঁ, বারাকপুর, গাইঘাটা, সন্দেশখালির, আমডাঙার মতো বহু জায়গায় দখল হয়ে গিয়েছে দলীয় কার্যালয়। তিনটি পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলর মঙ্গলবার ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। মঙ্গলবার দিল্লিতে ভাটপাড়া-সহ কাঁচরাপাড়া পুরসভার ১৭ জন, হালিশহর পুরসভার ১৭ জন ও নৈহাটি পুরসভার ২৯ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। মঙ্গলবার তাই তড়িঘড়ি কোর কমিটির বৈঠক ডাকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে জেলাজুড়ে যে পার্টি অফিসগুলি বিজেপি দখল করেছে বুধবার থেকেই তা পুনরুদ্ধারের করতে ময়দানে নামবে তারা। তার জন্য জেলার দশজন বিধায়ক নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, “সুনীল সিংকে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের কনভেনর করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদও দেওয়া হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বারাকপুর এলাকায় নিজেদের পার্টি অফিসগুলি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করব। তবে ঝামেলা পাকালে আমাদের লোকেরাও চুপ করে বসে থাকবে না।”
এদিন সুনীল সিংকে দলের সাংগঠনিক পদ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় তৃণমূল শিবিরের মধ্যেই। দলীয় সূত্রে খবর, এদিন জেলার কোর কমিটির বৈঠকে, জেলা নেতৃত্বকে কড়া ভাষায় নিজের বক্তব্য জানান। তার সঙ্গে সাংগঠনিক দায়িত্ব না দিলে দল ছাড়ারও হুমকি দেন। যদিও সে কথা অস্বীকার করেছেন সুনীল সিং ও অন্যান্য জেলা নেতৃত্ব। সুনীল সিং জানিয়েছেন, “দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে, আমারও দলের প্রতি আস্থা আছে। একেবারে নিচুতলা থেকে শুরু করব। ফের দলকে আমরা বারাকপুরে সে-ই জায়গায় ফিরিয়ে আনব। রাজনীতিতে হার-জিৎ আছেই।” বারাকপুরের অর্জুন ঘনিষ্ঠ বহু তৃণমূল নেতার কাছেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। সে ক্ষেত্রে সুনীল সিং কি বাদ গিয়েছেন? নোয়াপাড়ার বিধায়ক তথা গাড়ুলিয়ার পুরপ্রধান সুনীলবাবুকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে তিনি ঘুরিয়ে বলেন, “আমি তো বাচ্চা নই যে, প্রস্তাব দিলেই শুনতে হবে?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.