সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এবার নেমে এল রাস্তায়। বুধবার মুর্শিদাবাদ সফরের সময় ডোমকলে বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে কালো পতাকা দেখালেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। ডোমকল হাসপাতাল মোড়-সহ একাধিক জায়গায় সকাল থেকেই জড়ো হয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। রাজ্যপালের কনভয়ের উদ্দেশে কালো পতাকা দেখান তাঁরা। এদিন এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন রাজ্যপাল। ডোমকল গার্লস কলেজের ভবনের উদ্বোধনে যান তিনি। এই ৫০০ কিমি সফরের জন্য রাজভবনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে হেলিকপ্টার চাওয়া হয়। কিন্তু নবান্ন জানিয়ে দেয়, হেলিকপ্টার দিতে পারবে না। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের আমন্ত্রণেই ডোমকলে গিয়েছেন রাজ্যপাল।
এদিকে, আগামী ২৬ নভেম্বর রাজভবনে সংবিধান দিবস পালনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন বলে আশাবাদী রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বুধবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরের সার্কিট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে এমনই আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনের অনুষ্ঠানে যাবেন কিনা, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যপাল বলেন, ‘আমার শঙ্কা নেই, উনি নিশ্চয়ই আসবেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে, রাজ্যপাল নিমন্ত্রণ করার কারণে এবং যেহেতু রাজভবনে অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাই আমার তো মনে হয় উনি আসবেন। এমন কোনও কারণ নেই যে, উনি আসবেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে একমাস আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সম্ভাব্য প্রোগ্রাম পাঠানো হয়েছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত ওনার পক্ষ থেকে কোনও চিঠি আমার কাছে আসেনি।’
ওই বিষয়ে রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘এই সংবিধান দিবসের শুরু অনেক পরে হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি মোদি সরকারকে অভিনন্দন জানাই। সংবিধান প্রণেতা বিআর আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মদিবসে সংবিধান দিবস ২৬ নভেম্বর পালন করা ঠিক হয়। রাজভবনে গতবছর রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সংবিধান দিবস পালন করেছিলেন।’ মুর্শিদাবাদের ডোমকলে কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যপাল। এদিন দীর্ঘপথ তাঁকে হেলিকপ্টার ছাড়াই যেতে হওয়ায় নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেননি রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘আমি রাজ্য সরকারের কাছে হেলিকপ্টার চেয়েছিলাম। হেলিকপ্টারের বিষয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন, আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। উনি উপভোগ করুন। আমার এখানে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। এখানে এসে জানতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী এখানে এর আগে হেলিকপ্টারে এসেছিলেন।’
এদিনও কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে রাজ্যপালের উপস্থিতিতে পুলিশের কোনও আধিকারিককে দেখা না যাওয়ায় নিজের মতামত জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেছেন, ‘বলা হচ্ছে, আমি সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছি। আমি আপনাদের কাছেই জিজ্ঞাসা করছি (সাংবাদিকদের কাছে), আমি যদি সমান্তরাল প্রশাসন চালাতাম, তাহলে কি এখানে পুলিশ সুপার আসতেন না? এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, ডিএসপি, ইন্সপেক্টর বা পুলিশের কোনও আধিকারিক থাকতেন না? এটা আশ্চর্যের ব্যাপার নয় কি? আপনারাই দেখুন, এখানে ওরা সবাই অনুপস্থিত। ভারতীয় সংবিধানে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করা প্রয়োজন। যেকোনও বিষয়ে রাজনীতি নিয়ে আসা আমি ভুল বলে মনে করি। আমি একটা অনুরোধ করতে পারি, প্লিজ, ভারতের আইন, ভারতের সংবিধানকে বিশ্বাস করুন। তবে এসব নিয়ে কিছু ভাবছি না। আমি আমার কাজ করে যাব। আমার কাজ করার ক্ষেত্রে কেউ কোনও প্রকার বাধা দিতে পারে না। আমার কাজ আমাকে করতে হবে। তবে যা ঘটছে, তা সঠিক নয়। এখানেই দেখুন, যেখানে রাজ্যপাল পৌঁছে গিয়েছেন, সেখানে যাদের থাকা উচিত, তারা অনুপস্থিত। তবে আমার মনে, আমার কাছে এর কোনও প্রভাব পড়ে না। এটা ভাল নয়।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.