চঞ্চল প্রধান ও রঞ্জন মহাপাত্র: নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রাম এবং নিজভূমি কাঁথি – দুই এলাকাতেই বহু চেষ্টাতেও সমবায় ভোটে দলের খাতা খোলাতে পারলেন না বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হল তাঁকে। রবিবার নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সমবায়ের ৫২টি আসনের মধ্যে ৫১টিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে তৃণমূল। একটিতে কোনওরকমে জিতেছে সিপিএম। শুধু তাই নয়, নন্দীগ্রামে বিজেপি মাত্র ৩-৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কাঁথি ৩ ব্লকের মারিশদায় সবক’টিতেই জয়ী তৃণমূল। সেখানেও বিজেপির প্রাপ্ত ভোট কোনও কোনও আসনে এতই কম যে তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে শুভেন্দু। কারণ, এই বিরুলিয়া অঞ্চল গত ভোটে শুভেন্দুকে অনেকটাই লিড দিয়েছিল। সেখানেই এবার শুভেন্দু নিশ্চিহ্ন।
অন্যদিকে, হুগলির সিঙ্গুরে বামেদের দখল থেকে একটি সমবায় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। সিঙ্গুর বিধানসভার চণ্ডীতলা ২ নম্বর ব্লকের কাপাসাহাঁড়িয়া অঞ্চলে তৃষা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৯টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। জয়ের কাণ্ডারী রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘এই জয় মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয়।’’ রবিবার নন্দীগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের হানুভুঁইয়া-শিবরামপুর-ঘোলপুকুরিয়া কৃষি উন্নয়ন সমিতি হল নন্দীগ্রামের সবচেয়ে বড় সমবায় সমিতি। যার ৫২টি আসন এবং কাঁথির মারিশদার সমবায় সমিতির ৪১টি প্রতিনিধি নির্বাচন।
নন্দীগ্রামে সর্ববৃহৎ সমবায়ে ২৯টিতে প্রার্থী দিয়ে কোনওক্রমে সিপিএম একটি আসনে জয়ী হয়েছে। বাকি ৫১টি আসনে আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মোট ভোটার ছিলেন ২৬০০ জন। যার ৯৬ শতাংশ ভোটই পেয়েছে তৃণমূল শিবির। আর শুভেন্দুরা ৪০টি ডেলিগেটের জন্য লড়ে পেয়েছেন শূন্য। গোটা গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোটও প্রায় শূন্যই বলা যায়। ফলে গতবারের মতো এবারও এই সমবায় সমিতি পরিচালনার রাশ নিজেদের হাতেই রাখল তৃণমূল।
মাথায় রাখতে হবে, গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভার এই বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সকলের নজরে উঠে আসে। সে সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্থানীয় নেতা প্রলয় পালের একটি ফোন কলের ক্লিপিং ভাইরাল হয়। এটি সেই প্রলয় পালের নিজের অঞ্চল। ভোট লুট, সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল প্রলয়ের বিরুদ্ধে। বহু তৃণমূলকর্মী এই এলাকায় ঘরছাড়া ছিলেন। সেখানেই এদিন বিরাট নিরাপত্তায় সমবায় সমিতির নির্বাচন হয়। স্বাভাবিকভাবেই বেশ উত্তেজনা ছিল। ফল সামনে আসতেই উচ্ছ্বাসে ভেসে যান তৃণমূলকর্মীরা।
দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “এই বিরুলিয়ায় শুভেন্দুবাবু সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তিনি যাকে নিজের গড় বলতেন, সেখানে এই অবস্থা কেন? সব আসনে প্রার্থী দেওয়া দূরে থাক, ভোটও তো তলানিতে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামের হানুভুঁইয়া-শিবরামপুর-ঘোলপুকুরিয়া সমবায় সমিতি ভোটে প্রমাণিত হল নন্দীগ্রামের মানুষ ভুল বুঝতে পেরে ঘাসফুলের দিকে সরে আসছেন। নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে। এই স্লোগানে চাঙ্গা তৃণমূল শিবির।’’
কাঁথিতেও শাসকশিবিরে তুমুল উল্লাস। কারণ, সেখানেও শুভেন্দুবাবুরা হালে পানি পাননি। মারিশদা সমবায় সমিতির ৪১টি ডেলিগেট আসনের জন্যে প্রার্থী ছিলেন ৭৯জন। ভোটারের সংখ্যা ২০০০। মারিশদা বিজয়কৃষ্ণ জাগৃহী বাণীপীঠ ও মারিশদা কন্যা বিদ্যামন্দিরে ভোটগ্রহণের সময় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। ঝামেলা বাধে। টানটান উত্তেজনার মধ্যে ভোট শেষ হয়। গণনার পর দেখা যায় বিজেপি খাতাই খুলতে পারেনি। ৪১টি আসনেই জয়ী তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, সিপিএম ও বিজেপি অলিখিত জোট করেই প্রার্থী দেয় তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেছেন, “পরপর সমবায় নির্বাচন হল। কোথাও খাতা খুলতে পারেননি শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আবার রাজ্যে পরিবর্তনের কথা বলছেন। মানুষ সবটা বুঝে গেছেন বলেই উন্নয়নের পাশে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করছেন। আর বিজেপি খাতা খুলতে না পেরে ২০২৪ সালে ফিনিশ হয়ে যাবে।” যদিও কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, “সামান্য সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলকে ছাপ্পা ভোট, ভয় দেখানো, বুথে বসতে না দেওয়ার মতো কাজ করতে হচ্ছে। ভোট হলে আমরাই জিততাম।”
রবিবার সিঙ্গুর বিধানসভার অন্তর্গত চণ্ডীতলা ২নং ব্লকের কাপাসাহাঁড়িয়া অঞ্চলের তৃষা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতিরও নির্বাচন ছিল। রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক বেচারাম মান্নার অকান্ত চেষ্টায় তৃণমূল কংগ্রেসের নয়জন প্রার্থীই এখানে জয়লাভ করেন। প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের পর থেকে এই সমবায় সমিতি বামপন্থীদের দখলে ছিল। প্রায় ৪৪ বছরের মাথায় সেই সমিতি পরিচালনার দায়িত্ব পেল তৃণমূল কংগ্রেস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.